চারদিকে কাঠফাটা রোদ। যে দিকেই চোখ যাবে, মনে হবে যেন
রোদে ঝলসে গেছে বাড়িঘর, গাছপালা। ৩২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে বলরামপুরের সুপুরডি পেরলেই বলরামপুর বাজার। প্রতিটা দেওয়ালেই ঘাসফুল। পদ্মফুল ফুটেছে ঠিকই, তবে তা মেরেকেটে দু’-তিন দেওয়ালে। চোখের দেখা যদি মাপকাঠি হয়, তাহলে মানতেই হবে, এখানে দেওয়াল-প্রচারে বিজেপির চেয়ে ঢের এগিয়ে তৃণমূল। আসলে নামে চতুর্মুখী লড়াই হলেও জঙ্গলমহলের এই জেলায় প্রতিপক্ষ আসলে দুই। তৃণমূল এবং বিজেপি। আর কেউ কোথাও নেই। দেওয়ালে, প্রচারে, চায়ের দোকান থেকে হোটেল, স্টেশন থেকে বাজার— চর্চা শুধুই তৃণমূল না বিজেপি, জিতবে কে?
পাঁচ বছর আগের লোকসভা ভোটের হিসেব ধরলে রাজ্যের শাসক দলের কোনও চিন্তাই নেই। দ্বিতীয় হওয়া বামেদের সঙ্গে তৃণমূলের ব্যবধান ছিল দেড় লক্ষেরও বেশি। এবারও দল প্রার্থী করেছে বিদায়ী সাংসদ, পেশায় চিকিৎসক এবং ভদ্র ও সজ্জন বলে পরিচিত মৃগাঙ্ক মাহাতোকে। আর উন্নয়ন যে হয়েছে, তা মানছেন বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারাও। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলরামপুরেরই বিধায়ক। একের পর এক কর্মীসভা করে চলেছেন। তাঁর গলায় আত্মবিশ্বাসের সুর, ‘পঞ্চায়েতের ফল খারাপ হয়েছে। কিন্তু, পরিস্থিতি এখন অনেক ভাল। স্রেফ হাওয়া দিয়ে তো ভোট হয় না, সংগঠন লাগে। সেই সংগঠন কোথায় বিজেপির?’
প্রসঙ্গত, ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে পুরুলিয়া কেন্দ্রে বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোট সাড়ে পাঁচ লক্ষেরও বেশি। তৃণমূল নেতাদের মতে, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে বাম-কংগ্রেসের প্রার্থী কার্যত ছিল না। ফলে সেই ভোট বিজেপিতে গিয়েছিল। লোকসভায় অন্য ছবি। এখানে ওই দুই শিবির যত ভোট টানবে, ততই তাঁদের লাভ। রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র লাগোয়া গ্রামে প্রচারের ফাঁকে তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্কবাবু বলেন, ‘চার দলের লড়াই কিন্তু আমাদেরই সুবিধা দেবে।’ তবে এখনও বিজেপি শিবিরের আশা, বাম-কংগ্রেস ভোটের বড় অংশ তাদের দিকে ঝুঁকবে। এবং পুরুলিয়া আসনে ঘাসফুলকে হারিয়ে জয়ী হবে পদ্মফুলই।
আবার কংগ্রেস, সিপিএম দু’দলের একাধিক নেতা একান্ত আলোচনায় আক্ষেপ করেছেন, এবার জোটের প্রার্থী থাকলে লড়াইটা অন্য রকম হত। ভোটও বাড়ত। পুরুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী, চার বারের সাংসদ বীরসিংহ মাহাতোর সখেদ মন্তব্য, ‘আমার তো সিংহ আঁকার লোকই নেই!’ ঘটনা যে, এতবারের সাংসদের জন্য ফ্রন্টের ‘বড়দা’ সিপিএমকে সে ভাবে পথে নামতে দেখাও যাচ্ছে না। বদলে তাও দেখা যাচ্ছে বিজেপিকে। দু’-একটা বাড়ির ছাদে উড়ছে রাম ও হনমুানের পতাকাও। তা দেখে বিরক্ত শহরের এক বাসিন্দা তথা প্রবীণ আইনজীবীর আক্ষেপ, পুরুলিয়ার এমনটা আগে দেখিনি। বিজেপি যে এখানেও রামের নামে যে ভোট পাওয়ার চেষ্টা করছে, তা অস্বীকারের উপায় নেই। শুধু তাই নয়, ইদানীং জেলায় ‘বাম’ বলে পরিচিত নেতাদের ‘রাম’-এর দিকে ঘেঁষতে দেখে বীতশ্রদ্ধ আপামর পুরুলিয়াবাসীও।