বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ওন্দা স্টেডিয়ামে জনসভা করলেন যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের এই মাত্রাছাড়া গরমের মধ্যেও বিপুল সংখ্যক মানুষ সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। আজকের এই তীব্র দাবদাহ উপেক্ষা করে যারা সভায় এসেছেন তাঁরা যে শুধু বক্তব্য শুনতে আসেননি, আগামী ২৩ মে যে বিজেপিকে দেশছাড়া করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছেন সেই কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
সভার প্রথম থেকেই তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান। মোদী-অমিত শাহের মত ব্যক্তিরা বারবার বাংলায় ছুটে আসছেন ও তাঁদের সভা করা নিয়েও কটাক্ষ করেন তিনি। মোদী-শাহের সভায় মাঠ ভরাতে ব্যর্থ হয়েছে গেরুয়া শিবির সেই কথাও তুলে ধরেন তিনি।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার অমিত শাহ বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষ ও মেদিনীপুরের প্রার্থী দিলীপ ঘোষের সমর্থনে সভা করেন। সেখানেও লোক টানতে ব্যর্থ বিজেপি শিবির। এছাড়া ঘাটালের প্রার্থী ভারতী ঘোষকে তীব্র আক্রমণ করেন তিনি। অমিত শাহকে কটাক্ষ করে বলেন, ‘অমিত শাহ কাল এমন একজনের সমর্থনে সভা করতে এসেছেন যাঁকে সুপ্রিম কোর্টের তরফে বলা হয়েছে প্রতারক এবং যাঁকে জেলায় প্রবেশ করার অনুমতি দেয় নি দেশের সর্বোচ্চ আদালত।’ এছাড়াও তিনি সারদা-নারদা নিয়েও খোঁচা দেন মোদী-শাহকে। নাম না করে মুকুল রায়কে ‘গদ্দার’ বলেও কটাক্ষ করেছেন এবং তাঁদের মত মানুষকে দলে নেওয়া মোদীর ভুল তাও মনে করিয়ে দেন তিনি।
মোদীর সেনা ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করাকেও তিনি তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। এছাড়া সরাসরি মোদী সরকারকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন তিনি। মোদীর প্রচার খরচ নিয়েও প্রশ্ন রেখে গেলেন এইদিন সভামঞ্চ থেকে। এছাড়া মমতা সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারের তুলনাও টেনে এনেছেন। উদাহরণ হিসেবে রাজ্য ও কেন্দ্রের প্রকল্পগুলোকেও তুলে ধরেছেন। খতিয়ান দেখিয়ে মোদী সরকারের প্রকল্পগুলোর ব্যর্থতা তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্যেরও খতিয়ান দিয়েছেন তিনি।
মোদীর ‘স্টিকার দিদি’ মন্তব্যকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন তিনি। তারপর তিনি মোদীকে ‘টুকলি দাদা’ হিসেবে আখ্যা দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাশ্রী, কৃষক বন্ধু-এর মতো প্রকল্প ধাঁচে মোদীর প্রকল্পগুলো। সেটাও মনে করিয়ে দিলেন তিনি।
বাংলার মানুষ যে ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সরকার গড়তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশেই থাকবেন তা নিয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি। গত তিনদিন ধরে যে বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়ায় ঘুরছেন এবং প্রতিটি মানুষ যেভাবে মমতার জয়গান গাইছেন সেই কথাও তাঁর বক্তব্যে তুলে আনেন তিনি। এই চড়া রোদে মিটিং করার ক্ষমতা যে আর কারোর নেই তাও তিনি উল্লেখ করেন। আগামীকাল মমতা যে এক জেলায় তিনটি সভা করবেন মানুষের জন্যে কাজ করার ক্ষেত্রে যে তিনি কোনও কিছুকে প্রাধান্য দেন না সেই কথাও আবার জানান তিনি।
আগামীকালের সব সভায় যে লক্ষাধিক মানুষের ভীড় হবে তাও জানান তিনি। এও বলেন, “ ক্ষমতা থাকলে দিল্লী থেকে ঝাড়খন্ড থেকে লোক এনে সভা করাক মোদী। তবুও একদিনে তিন সভার ক্ষমতা থাকবে না তাঁদের”। এরপরে মমতার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
অভিষেক আরও জানান, ‘আজকের বিপুল জনজোয়ার বুঝিয়ে দিচ্ছে মানুষ আছে তৃণমূলের পাশেই। আমি এই আবেদনই করতে চাই গতবারের তুলনায় এবার আরও বেশি লিডে আমাদের প্রার্থীকে জেতান। এমন ভাবে জেতান যাতে আর কোনও সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।’
এরপরে বিষ্ণুপুর-বাঁকুড়ায় যে উন্নতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন তাঁর কথাও বলেন। এত বছরে যে মোদী-শাহকে এখানে দেখা যায়নি সেই কথাও বলেন তিনি। অথচ একমাত্র তৃণমূলই যে মানুষের পাশে সবসময় থাকে সেই খতিয়ান দেন তিনি। বিজেপি যে ভোটের পাখি সেই কথাও স্পষ্ট ভাবে বলেন তিনি। বিজেপি যে মিথ্যা কথা বলে চলেছে তাও জানান তিনি। মোদী যে কর্মসংস্থান করতে পারেননি তাই নিয়েও তোপ দাগেন তিনি।
রাম বাম আঁতাত নিয়েও মুখ খোলেন তিনি। মমতা যে ধর্মের বিভেদ দিয়ে রাজনীতি করেন না সেই কথাও আবার বলেন তিনি। বক্তব্যের শেষে বলেন, ‘এখন রাম আর বাম এক হয়েছে। তোমার রাম আর তোমার বাম অস্ত্র হাতে মিছিল করে আর আমার দুর্গা উন্নয়নের ডালি নিয়ে বাংলার মানুষকে চাঙ্গা করে। তোমার রামের যাবার পালা, ব্যাগবস্তা গোছাও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছে তেড়ে ঢপবাজরা পালাও।মনে রাখবেন আপনারা ভোটটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দিচ্ছেন। তাই আসুন, ভোটবাক্সে জবাব দিন ওদের যাবতীয় মিথ্যে কথার। জয় হোক বাংলার।’ আজকের সভার এই উচ্ছ্বাস আবারও প্রমাণ করল মানুষ আছে মমতার পাশেই।