গত ১১ এপ্রিল থেকেই দেশ জুড়ে শুরু হয়ে গেছে সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন। দেখতে দেখতে ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গেছে সাত দফার মধ্যে ৫ দফার ভোট। বাকি আর মাত্র দু’দফা। কিন্তু এখনও দেশের কোনও প্রান্তে দেখা নেই গতবারের সেই ‘মোদী লহর’-এর। এমনকী সাম্প্রতিককালে বিজেপির খাসতালুক বলে পরিচিত যোগী রাজ্যের গোরক্ষপুরেও একই হাল। দু-বছরের মধ্যেই এতটা পরিবর্তন! বিশাল, ঝাঁ চকচকে গোরক্ষপুর মঠ, ভীম সরোবর, মন্দির সবই আগের মতো আছে৷ নেই কেবল লোকসভা ভোটের ব্যস্ততা৷
অথচ, তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে তো ভোট পরিচালনা হত এখান থেকেই৷ মন্দিরের পাশে অফিসঘরে ভোটের সময় ব্যস্ততা তুঙ্গে থাকত৷ যোগী নিজে এসে বারান্দায় বসতেন৷ তারপর প্রচারে বেরোতেন৷ যোগী এখন লখনৌয়ের মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে৷ সারা রাজ্য ঘুরে প্রচার করছেন৷ কিন্তু তাই বলে ভোটের ব্যস্ততা উধাও হয়ে যাবে মঠ থেকে? এমনকী কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া ভোজপুরী বিনোদন জগতের তারকা প্রার্থী রবি কিষেণ যখন মনোনয়নপত্র পেশ করলেন, তখনও যোগী আসেননি৷ প্রচারে এখনও পর্যন্ত গোরক্ষপুর তাঁর অধরা থেকে গিয়েছে৷ আর মঠ থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটি হোটেলে রবি কিষেণ তাঁর নির্বাচনী অফিস করেছেন৷
প্রার্থীর সচিব অজিত সিং কাজের সূত্রে দিল্লীর রোহিণীর বাসিন্দা৷ কিন্তু মঠের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত৷ তাঁর ব্যাখ্যা, প্রার্থী পছন্দ না হলে যোগীজি কোনওদিনই তাঁর হয়ে সেভাবে কাজ করেন না৷ এই প্রার্থী তো দিল্লী থেকে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ অজিতের এই কথাতেই স্পষ্ট যে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো এখানেও ‘বহিরাগত’ প্রার্থী নিয়ে দলের অন্দরে চাপা ক্ষোভ রয়েছে। তবে পরিবর্তন শুধু এটুকুই নয়৷ আগে মঠে হিন্দু যুবা বাহিনীর নেতাদের মধ্যে কেউ না কেউ থাকতেন৷ হিন্দু যুবা বাহিনী হল যোগীর তৈরি করা কট্টর হিন্দুত্বের পথে চলা বাহিনী৷ একসময় যোগীর প্রতিটি সভায় তাঁদের দেখা যেত৷ পূর্ব উত্তরপ্রদেশ জুড়ে এই বাহিনীর শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে ছিল৷ কিন্তু এখন সেই বাহিনীর লোকেদের খোঁজ পাওয়াই দুষ্কর৷
প্রাক্তন প্রভাবশালী সভাপতি সুনীল সিং-এর সঙ্গে যোগীর বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে৷ সুনীলকে জেলেও ভরেছিল যোগীর পুলিশ৷ তিনি এ বার নির্দল হিসেবে লড়তে চেয়েছিলেন৷ বিশাল মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র পেশ করেছিলেন৷ কিন্তু মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়৷ এখন হিন্দু যুবা বাহিনীর অফিসে তালা ঝুলছে৷ নিন্দুকেরা বলে, দিল্লীর নির্দেশে এই যুবা বাহিনী গুটিয়ে ফেলতে হয়েছে যোগীকে৷ তাদের সঙ্গে কার্যত সম্পর্কচ্ছেদ করতে হয়েছে৷ আর প্রার্থী হতে না পেরে সুনীল এখন বিজেপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করে দিয়েছেন৷
উল্লেখ্য, গোরক্ষপুরে একসঙ্গে অনেকগুলো লড়াই হচ্ছে৷ প্রথম লড়াই তো অবশ্যই সপার প্রার্থী রামবহাল নিষাদের সঙ্গে রবি কিষেণের৷ এ ছাড়াও যোগী বনাম হিন্দু যুবা বাহিনীর প্রাক্তনীদের এবং সবথেকে চিত্তাকর্ষক লড়াই হল, মোদী ও দিল্লীর অন্যান্য বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বনাম যোগীর৷ এই শেষ লড়াইটা হচ্ছে একেবারেই ভিতরে ভিতরে৷ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এখানে নিজের প্রার্থী দিয়েছে৷ তাঁকে মেনে নিতে হয়েছে যোগীকে৷ তাঁকে এই বার্তাও দেওয়া হয়েছে, উপ নির্বাচনের পর আবার হারলে যোগীর রাজনৈতিক অবস্থা দুর্বল হবে৷ সবমিলিয়ে এ কথা বলাই যায় যে, এই ভোটের বাজারে গোরক্ষপুরে খুব একটা সুবিধাজনক স্থানে নেই বিজেপি।