২৮ বছর আগে তামিল জঙ্গীদের হাতে নিহত বাবার শবাধারের পাশে যাঁকে হাঁটতে দেখে সমবেদনায় আকুল হয়েছিল আসমুদ্রহিমাচল, সেই প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে আজকের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরার বিস্তর অমিল। এখন তাঁর বয়স ৪৭। দুই সন্তানের মা তিনি। তাঁর শাড়ি পরার ধাঁচ, হাসির উজ্জ্বলতা, চুলের ছাঁট, হাত নাড়ানোর মুদ্রা— বড় পরিচিত ভারতবাসীর। বলতে গেলে, প্রতি পদক্ষেপেই এখন ঠাকুমা ইন্দিরা গান্ধীকে মনে করিয়ে দেন প্রিয়াঙ্কা। একদিকে মা, দাদা। অন্যদিকে ডাক আমজনতার। খাসতালুক ধরে রাখার লড়াই তো বটেই। আবার সুর অটুট রেখেই ‘নয়া দিশা’য় দেশ বাঁচানোরও ‘সংগ্রাম’। দেশের ‘নয়া দিশারী’ হতে এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন রাহুল। প্রশ্রয় তাঁর যতই থাকুক, ময়দানে থেকেও আড়ালেই সোনিয়া। তাই পরিবার থেকে দেশ, জোড়া দায় একাই যেন কাঁধে তুলে নিয়ে আমেঠি আর রায়বরেলি চষে বেড়াচ্ছেন সোনিয়া-তনয়া৷
প্রচারের এই শেষ প্রহরে উত্তরপ্রদেশ ছাড়িয়ে তামাম দেশের নজরবন্দী হাই প্রোফাইল জোড়া কেন্দ্র আমেঠি আর রায়বরেলি। আর সেই তল্লাটেই গ্রাম ছাড়িয়ে গঞ্জ, আবার শহরেও গলি থেকে রাজপথে ছুটে চলেছেন প্রিয়াঙ্কা। শুক্রবার প্রচার একেবারে শেষ পর্যায়ে। আমেঠি আর রায়বরেলির ভোট প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা বলেন, গোটা উত্তরপ্রদেশ ঘুরেছি। গত কয়েক দিন ধরে রয়েছি রায়বরেলি ও আমেঠিতে। একটাই ছবি, মানুষ আমাদের পক্ষে। কৃষকের আয় বাড়েনি, অর্ধেক হয়েছে। চাকরি পায়নি বেকাররা। মহিলা থেকে পুরুষ – ভাল নেই কেউই। মানুষ বিলক্ষণ বুঝছেন মোদী সরকারের ‘ভাঁওতা’। আর এ তল্লাটের মানুষ জানেন, এই গোটা এলাকার স্থান সবসময়ই আমাদের পরিবারের হৃদয়ে। তাই যেখানেই যাচ্ছি, বিপুল সাড়া মিলছে। জিতব আমরাই।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে গিয়ে তিনি বলেন, মোদীজি বলছেন কৃষক থেকে আমজনতা, সবস্তরেই অগ্রগতি হয়েছে। হ্যাঁ, অগ্রগতি হয়েছে, তবে তা শুধু ‘বিজ্ঞাপন’-এর। বাস্তবে নয়। চাষির হাল দেখুন। ফসলের দাম নেই। সেচ নেই। কোনও সহায়তা নেই। রাতভর খেতে চৌকিদারি করেও তার পেট ভরছে না। আর উনি নিজেকে দেশের ‘চৌকিদার’ বলে জাহির করছেন। এসবের জবাব মিলবেই। তিনি আরও বলেন, ফসল বিমা নামেই চালু হয়েছে। কিন্তু সেই টাকা পাচ্ছে কে? চাষিরা ওই বিমার নামে যে টাকা দিচ্ছেন, সেই টাকা লুটে নিয়ে বিজেপি ঘনিষ্ঠ উদ্যোগপতিরা ১০ হাজার কোটি টাকার মুনাফা করছেন। কিন্তু জমি আর চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েও চাষিরা কোনও সাহায্যই পাচ্ছে না। আওয়াজ তুললেই গেরুয়া শিবিরের নেতারা দমিয়ে দিচ্ছেন। বলছেন, অত টাকা সরকারি খাতে নেই।
বাংলা নিয়ে কথা উঠলে প্রিয়াঙ্কা বলেন, আমি বাংলায় যাইনি। কাজেই বাংলার হালচাল, বিশেষত ভোট নিয়ে বলতে পারব না। তবে, বাঙালি ঐতিহ্য এবং বাংলার সংস্কৃতিকে আমি এবং আমার গোটা পরিবার ভীষণই শ্রদ্ধা করি। গোটা দেশের মধ্যে বাংলার আসন, অবস্থান অন্য মাত্রা বহন করে। গোটা দেশে মোদি-বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসের মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলার তৃণমূল কংগ্রেসও যে এককাট্টা, সে কথাও স্বীকার করেন সোনিয়া-তনয়া। বাংলার বাঘিনী মমতাকেও যে তিনি কতটা শ্রদ্ধা করেন, সে কথাও জানাতে বলেননি কংগ্রেসের নতুন ‘আইকন’। প্রিয়াঙ্কার স্পষ্ট কথা, এটা ঠিক যে বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে তৃণমূলের। কিন্তু নেত্রী হিসাবে আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি।