আকাশের মুখভার। সমুদ্র ফুলেফেঁপে উঠেছে। ফণা মেলেছে ‘ফণী’। গত ৪৩ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ সাইক্লোন আছড়ে পড়তে চলেছে ভারতে। আপাতত উপকূল থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই ঘূর্ণিঝড়। অন্ধ্রপ্রদেশ, উড়িষ্যা এবং বাংলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। প্রভাব পড়বে ১০ কোটি মানুষের জনজীবনে। ইতিমধ্যে তিন রাজ্যেই জারি করা হয়েছে উচ্চ সতর্কবার্তা।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে খবর, স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার সময় ঘণ্টায় সর্বাধিক ১৭৫ কিলোমিটার বেগে এই ঝড় বইতে পারে। প্রথমে সাধারণ সাইক্লোন হিসেবে ফণীর জন্ম হলেও, ধীরে ধীরে তেজ বাড়িয়ে এখন সে পরিণত হয়েছে সুপার সাইক্লোনে। ফলে এর একটি ঝাপটায় তছনছ হয়ে যেতে পারে উপকূলবর্তী এলাকা।
সরকারি নির্দেশে ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়েছে ওড়িশার ১৯টি জেলায়। সমুদ্র লাগোয়া এলাকাগুলি খালি করে দিতে বলা হয়েছে। পর্যটক ও স্থানীয় মিলিয়ে সরানো হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ মানুষকে। ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যের জন্য জাহাজ ও হেলিকপ্টার নিয়ে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে নৌসেনা, বায়ুসেনা ও উপকূলরক্ষী বাহিনীকে। ওড়িশার জায়গায় জায়গায় মোতায়েন করা হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী–সহ উদ্ধারকারী দলগুলিকে। ইতিমধ্যে ওড়িশা উপকূলে রয়েছে নৌ–সেনার দু’টি জাহাজ। সরকারি সূত্রে খবর, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ২৮টি দল ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে ওড়িশায়, ১২টি অন্ধ্রপ্রদেশে, ৬টি বাংলায়। অতিরিক্ত ৩০টি দল মজুত রাখা হয়েছে যে কোনও আপৎকালীন অবস্থার জন্য। ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশের সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে ১৫মে পর্যন্ত।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, ওড়িশা থেকে ফণী মুখ ঘুরিয়ে যখন এ রাজ্যের দিকে আসবে, তখন তার দাপট কমলেও গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১৫ কিলোমিটারের কাছাকাছি। এর দাপটে কলকাতা–সহ রাজ্যের উপকূলীয় জেলাগুলিতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। শনি এবং রবিবার কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর, দুই বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কোথাও কোথাও প্রতি ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ঝড়ের গতিবেগ বেড়ে ঘণ্টায় প্রায় ১১৫ কিলোমিটার হতে পারে।
এদিকে, ইতিমধ্যে প্রাথমিকভাবে সুপার সাইক্লোনের কথা মাথায় রেখে ১০৪টি ট্রেনও বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের ফেরাতে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক সূত্রে খবর, ফণীর জেরে বিমান পরিবহণেও প্রভাব পড়তে পারে।