পাঁচ বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে রাজনীতিতে আসা দেব এখন অনেক বেশি পরিণত। এবারেও ঘাটাল থেকে তিনি প্রার্থী। যেখানেই প্রচারে যাচ্ছেন উপচে পড়ছে ভিড়, না শুধু তাঁকে দেখতে না, তাঁর রাজনৈতিক ভাষণ শুনতে। গতকাল হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী ডাঃ রত্না দে নাগের সমর্থনে সোমবার বাঁশবেড়িয়া ফুটবল ময়দানে আয়োজিত সভায় হাজির ছিলেন দেব।
তীব্র রোদ এবং চড়া গরমকে উপেক্ষা করে দেবের এই জনসভা পরিণত হল জনপ্লাবনে। বাঁশবেড়িয়ার জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেব বলেন, “ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে রাজ্যকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টা করছে তাদের একটাও ভোট দেবেন না। আপনাদের পাশাপাশি আমার চাওয়া একটাই রাজ্যের উন্নয়ন। তাই ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নের কাজ করতে থাকা তৃণমূল প্রার্থীদের চোখ বন্ধ করে ভোট দিন। তাহলে দেখবেন আগামী পাঁচ বছরে এই রাজ্যে দেশের মধ্যে উন্নয়নের তালিকায় সবার প্রথমে রয়েছে”।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন যে গোটা বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছে সেই কথ বারেবারে ফিরে আসছিল দেবের বক্তব্যে। দেব জানালেন, “আমি এখানে ভোট চাইতে আসিনি, আমি এসেছি এখানকার মানুষের আশীর্বাদ চাইতে। আমি কোন দলের বদনাম করতে চাই না। আমি শুধু বলব আপনারা ভেবে এমন একজনকে ভোট দেবেন যে দেশের উন্নয়নের পক্ষে। একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন দেখবেন বিগত কয়েক বছরে যেভাবে এরাজ্যের উন্নয়ন হয়েছে তাতে আপনার চোখের সামনে তৃণমূলই ভাসবে। পাশাপাশি তিনি কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী প্রভৃতি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে তৃণমূলকে জেতানোর দাবি জানান।সেই সঙ্গে দেব বলেন, এবারে বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ আসন নিয়েই তৃণমূল দিল্লী যাবে”।
এখান থেকে সভা করেই তিনি উড়ে যান গুপ্তিপাড়ায়। সেখান থেকে
বিকাল সাড়ে তিনটা নাগাদ গিয়ে ধনেখালি বাসস্ট্যান্ডের সভাস্থলে নামেন। তার আগেই অভিনেতা দেবকে দেখার জন্য প্রচুর মানুষ ভিড় জমান। ধনেখালিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা আমার থেকে অনেক বেশি রাজনীতি বোঝেন আমি আপনাদের রাজনীতি বোঝাতে আসিনি। সবাই যেন ভালো থাকে সবাই যেন শান্তিতে থাকে। সকাল সকাল ভোটটা দেবেন। দায়িত্ব নিয়ে বলছি যদি ভোট উন্নয়ন নিয়ে হয় তাহলে একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট পাওয়ার যোগ্য কি না তা নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে বিচার করুন। কারণ এই সরকার আপনার বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়েছে, আলো দিয়েছে, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল করেছে, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান হয়েছে। ২৮টা নতুন ইউনিভার্সিটি হয়েছে গত সাত বছরে যাতে ২০ লক্ষ ছাত্র ছাত্রী পড়াশোনা করছে বা পাশ করেছে। খাদ্যসাথী প্রকল্পে যেখানে নয় কোটির বেশি মানুষ দুই টাকা কেজি দরে চাল পাচ্ছে”।
বিজেপি–কে কটাক্ষ করে দেব বলেন, ‘বর্তমানে রাজনীতিতে ভোট চাওয়ার জন্য মানুষ অনেক নীচে নেমে গেছে। রামমন্দির, সেনা জওয়ানদের নামে ভোট চাওয়া হচ্ছে। আপনি হিন্দু, এই দলটা হিন্দুদের। তাই এই দলকেই ভোট দিন। এই হিন্দু–মুসলিম দেখিয়ে ব্রিটিশরা প্রায় ২০০ বছর আমাদের ওপর রাজত্ব করেছিল।’ সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে দেব বলেন, ‘ভোট দিন ভাল দেশ গড়ার লক্ষ্যে। ভোট দেওয়ার আগে ভাববেন কেমন সরকার চাইছেন। যদি ২০১৯–এর নির্বাচন উন্নয়ন নিয়ে হয়, তবে তৃণমূল কংগ্রেস ৪২–এ ৪২ হবেই।’
দুটি সভাতেই ভিড় ছিল দেখার মত। সভায় আসা সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্ছ্বাস বুঝিয়ে দিচ্ছিল মানুষ আছে মমতার পাশেই। ভরসা রাখছেন উন্নয়নেই। গতকালের সভায় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত, বাঁশবেড়িয়া পুরসভার পুরপ্রধান অরিজিতা শীল, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী, তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সত্যরঞ্জন শীল প্রমুখ।