এই মুহূর্তে ভোপালের বিজেপি প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞার একাধিক বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে যখন গোটা দেশ উত্তাল, তখন উঠে আসছে গেরুয়া শিবিরের আর এক ‘রত্ন’র কথা। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হওয়া জঙ্গী হামলার পর শোকে গোটা দেশ যখন মুহ্যমান, তখন কফিনবন্দী জওয়ানদের নিথর দেহের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে দেখা গিয়েছে এক গাল হাসিতে। গো-হত্যার শাস্তি হিসেবে প্রাণদণ্ডের দাবি তুলেছিলেন। জমি নষ্ট হওয়া আটকাতে আইন করে কবর নিষিদ্ধ করার পক্ষপাতী। আবার ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত রাম রহিমকে সাদাসিধে মানুষ বলতেও পিছপা হননি। এমনই বিতর্কিত চরিত্র উত্তরপ্রদেশের উন্নাও লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ বিজেপি সংসদ সদস্য গডম্যান সাক্ষী মহারাজ।
প্রসঙ্গত, গত পাঁচ বছর ধরে তিনি এমন সব মন্তব্য ও কাণ্ড করেছেন, তাতে বিতর্ক কখনও তাঁর পিছু ছাড়েনি। তাঁর জন্য বারবার বিপাকে পড়তে হয়েছে মোদী-শাহের দলকে। তবুও তাঁকে এবারও প্রার্থী করেছে বিজেপি। অবশ্য বলা ভালো, প্রার্থী করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, তাঁকে প্রার্থী করার বিষয়ে আপত্তি ছিল দলের অভ্যন্তরেই। তা জানতে পেরে সরাসরি বিজেপি সভাপতি অমিত শাহকে চিঠি দিয়ে সাক্ষী মহারাজ বলেছিলেন, ‘উন্নাও কেন্দ্রে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে প্রার্থী করলে ফল ভুগতে হবে দলকে।’ বিজেপি শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছে তাঁকেই উন্নাও কেন্দ্রে প্রার্থী করতে।
আর এই ইস্যুকেই মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন উন্নাও কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী অনু ট্যান্ডন। পরিষ্কার বাংলায় বলছেন, ‘সাংসদ শুধু বিতর্কে থাকার জন্য নানা মন্তব্য করেছেন। কোনও উন্নয়নের কাজ করেননি। এমন সব কাণ্ড ঘটিয়েছেন, তাতে এই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে লজ্জা বোধ করছি। আমি সাক্ষী মহারাজের কাছে হেরে গিয়েছি। কিন্তু কখনও মানুষের কাছ থেকে সরে যাইনি। আমি ছাড়া অন্য দুই প্রার্থী কিন্তু বহিরাগত।’ উন্নাওয়ের মানুষও বলছেন, বিজেপি প্রার্থীকে বেগ দেবে বিরোধীদের জোট। কারণ, বিরোধী ভোট এবার তিন নয়, দু’ভাগে ভাগ হবে।
কিন্তু অমিত শাহকেও যেখানে হুমকি চিঠি দিতে পারেন সাক্ষী মহারাজ, সেখানে বিরোধী প্রার্থীরা কীভাবে বেগ দেবেন তাঁকে! প্রশ্ন শুনে গান্ধীনগরের একটি লস্যির দোকানি বলে দিলেন, ‘মানুষ বলেও তো একটা জিনিস রয়েছে নাকি! ভোট তো তাঁরাই দেবেন।’ উন্নাও মেইন রোডের ধাবায় এক যুবকের স্পষ্ট জবাব, ‘জানেন না, ধর্ষণের কারণে সাজাপ্রাপ্ত বাবা গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের সমর্থনে মুখ খুলেছিলেন এই সাংসদ। বলেছিলেন, রাম রহিম এক সাদাসিধে মানুষ। তাঁকে অযথা হয়রান করা হচ্ছে।’
পাশে বসা আর একজন যোগ করলেন, ‘ভুলে গিয়েছেন নাকি সাক্ষী মহারাজ বলেছিলেন, কবর দেওয়া চলবে না, কবরে জমি নষ্ট হয়। তাই আইন করে কবর দেওয়া বন্ধ করা হোক।’ এখানেই শেষ নয়, উঠে এলে আরও অভিযোগ। একজন বলেন, ‘২০১৫ সালে ভয়াবহ দুর্যোগের জন্য উনি রাহুল গান্ধীকে দায়ী করেছিলেন। বলেছিলেন, রাহুল গোমাংস খেয়ে কেদারনাথ মদির দর্শন করেছিলেন। সেই পাপেই এই দুর্যোগ। আবার তিনিই বলেছিলেন, মুসলিমদের ঠেকাতে হিন্দু মহিলাদের চারটি করে সন্তানের জন্ম দিতে হবে।’
ধর্মগুরু তথা ৬৩ বছরের এই বিজেপি সাংসদের এই সব বিতর্কিত মন্তব্যে উন্নাওবাসীর কারও মনে আতঙ্ক জাগে, কারও মনে জাগে সাম্প্রদায়িক উল্লাস। তাতে অবশ্য বিশেষ কোনও হেলদোল নেই সাক্ষী মহারাজের। তাঁর সাফ কথা, ‘গোরু আমাদের মা। মাকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দিতে বা প্রাণ নিতে পিছপা হব না।’