উত্তরপ্রদেশের গুমনামি বাবাই কি নেতাজি? বারবারই উঠেছে এ প্রশ্ন। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে যেমন রয়েছে নানা মত, তেমনি আবার সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহলের শেষ নেই। সবমিলিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যু রহস্যের পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে গুমনামী বাবার রহস্য ঘনীভূত হয়েছিল। তবে এবার এক নতুন বইয়ের দাবি অনুযায়ী গুমনামি বাবাই হলেন নেতাজি এবং তিনি বহু বছর নিজের পরিচয় গোপন করে লুকিয়ে ছিলেন।
এই বইয়ে বলা হয়েছে, আমেরিকার এক হস্তলেখা বিশারদ কার্ল বাগেট নেতাজি এবং গুমনামী বাবার লেখা চিঠি পরীক্ষা করে দেখেছেন যে দু’টো হাতের লেখাই এক। অর্থাৎ একই ব্যক্তির হাতের লেখা। ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে কার্ল বাগেটের। হাতের লেখা পরীক্ষা করার জন্য কমপক্ষে ৫০০টি মামলায় তাঁর সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। তিনি তাঁর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে এখন একবারেই হাতের লেখা পরীক্ষা করে বলতে পারেন যে তা কার লেখা। কার্ল চিঠির লেখা পরীক্ষা করে দেখার পরই জানিয়েছেন যে, সুভাষচন্দ্র দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও বহুবছর গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন। গুমনামি বাবা ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর হাতের লেখায় একশো শতাংশ মিল পাওয়া গিয়েছে। এর অর্থ এটাই যে গুমনামি বাবাই হলেন নেতাজি, দাবি ওই বইয়ের।
প্রসঙ্গত, গুমনামী বাবা ও সুভাষচন্দ্রের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে, তা বহুবছর ধরে এ দেশে চর্চার বিষয় ছিল। এই জন্য কার্ল বাগেটের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁর অনুমান আজ পর্যন্ত ভুল প্রমাণিত হয়নি। তিনি গত ৪০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন। লেখক চন্দ্রচূড় ঘোষ এবং অনুজ ধরের ‘কাউনড্রাম: সুভাষ বোস’স লাইভ আফটার ডেথ’ বইতে গুমনামী বাবার লেখা ১৩০টি চিঠি রয়েছে। যা তিনি ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে পবিত্রমোহন রায়কে লিখে ছিলেন। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিতে কাজ করতেন পবিত্র এবং নেতাজির ঘনিষ্ঠ সহকারী ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। দু’জনের লেখা চিঠিই পরীক্ষা করে কার্ল বাগেট জানিয়েছিলেন যে একই ব্যক্তির লেখা চিঠিগুলি। যদিও তিনি তখনও পর্যন্ত জানতেন না যে তিনি নেতাজি-গুমনামী বাবার চিঠি পরীক্ষা করছেন। কার্ল বাগেট নিজেও খুবই অবাক হন এ বিষয়ে।
চিঠি পরীক্ষা করার পর কার্ল বাগেট তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছেন যে গুমনামী বাবা ও নেতাজি আলাদা আলাদা ব্যক্তি নন, বরং তাঁরা দু’জনেই এক ব্যক্তি। বইতে দাবি করা হয়েছে, পবিত্রমোহন রায় বেশ কয়েক বছর গুমনামী বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ছিলেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৫ সালের আগস্ট মাসে তাইওয়ানে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন নেতাজি। পরে তাঁর দেহাংশ টোকিওর রেনকোজিতে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও এই বিমান দুর্ঘটনার কোনও প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে অনেকেই বিশ্বাস করেন যে নেতাজি ছদ্মনামে গুমনামী বাবা হয়ে উত্তরপ্রদেশের ফৈজাবাদে বহু বছর বসবাস করেছেন। এমনকী মুখার্জি কমিশনও তাদের রিপোর্টে জানিয়েছিল যে গুমনামী বাবার সঙ্গে নেতাজির বেশ কিছু সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
অন্যদিকে, অযোধ্যার রাম ভবনের মালিক শক্তি সিংয়ের দাবি, ১৯৮২–৮৫ সাল জীবনের শেষ তিনবছর গুমনামী বাবা অযোধ্যায় কাটিয়েছেন। ১৯৮৫ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মারা যান গুমনামী বাবা। মৃত্যুর পর তাঁর বসতবাড়ি থেকে এমন অনেক কিছু উদ্ধার হয়, যা নেতাজি সুভাষচন্দ্রের জিনিসের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন গুমনামি বাবার ঘর থেকে উদ্ধার চশমার সঙ্গে নেতাজির চশমার মিল পাওয়া গিয়েছে। এমনকী নেতাজির পরিবারের ছবিও পাওয়া যায় তাঁর ঘর থেকে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ‘মিশন নেতাজি’ নামের এক বেসরকারি সংস্থাও দাবি করেছে যে ফয়জাবাদের গুমনামি বাবাই আসলে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস।