ভারতের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে দেশের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থায় আনতে ২০১৪ সালে ‘জনধন প্রকল্প’র ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বাংলায় কোনও ব্যাঙ্কেই খোলা যাচ্ছে না সেই প্রকল্পের অ্যাকাউন্ট! হ্যাঁ, কেন্দ্রীয় সরকার বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোনও নির্দেশ নেই। অথচ, নতুন জনধন অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। মঙ্গলবার তেমনই অভিজ্ঞতা হল শ্যামনগরের বাসিন্দা শিখা দাসের। পেশায় গৃহ সহায়ক শিখা গিয়েছিলেন ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (ইউবিআই) গাড়ুলিয়া শাখায় জনধন অ্যাকাউন্ট খুলতে। ব্যাঙ্কে তাঁকে বলা হয়, ‘জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা হবে না।’ অ্যাকাউন্ট খোলার আবেদন ফর্ম জমা নিয়ে আধিকারিকের মন্তব্য, ‘অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেলে ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হবে, তখন এসে হাজার টাকা জমা দিয়ে যাবেন।’
কিন্তু, কেন জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে না? ‘জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা বন্ধ রয়েছে। ফের কবে থেকে তা শুরু হবে জানা নেই’, জানান সেই আধিকারিকটি। পরিচিত এক ব্যক্তিকে গোটা বিষয়টি জানান শিখা। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানায়, জনধন প্রকল্পের আওতায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা বন্ধ নেই! উল্লেখ্য, জনধন প্রকল্প শুরুর গোড়ার দিকে রাজ্যে লিড ব্যাঙ্ক হিসাবে কাজ করেছে ইউবিআই। তবে এখন তারাই সরাসরি ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে গ্রাহকদের। জানা গেছে, ইউবিআইয়ের শ্যামনগর, শিয়ালদহ, ব্যারাকপুর কোনও শাখাতেই জনধন অ্যাকাউন্ট ‘খোলা হচ্ছে না’। একই হাল স্টেট ব্যাঙ্কের শাখাগুলিতেও।
এসবিআই-এর গাড়ুলিয়া, শ্যামনগর, সোদপুর, মালঞ্চ, চাকদা, নেহরু মার্কেট, কোথাওই খোলা হচ্ছে না জনধন অ্যাকাউন্ট। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (পিএনবি) লিলুয়া, বিরাটি, নিউ আলিপুর, টালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, কালিঘাট শাখা অথবা ব্যাঙ্ক অফ বরোদার সোদপুর, বাঘাযতীন, বাগুইহাটি, বিটি রোড কিংবা এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের একাধিক শাখাতেও আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, ‘জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে না।’ ব্যতিক্রম কেবল পিএনবি-র বসিরহাটের ডান্ডির হাটখোলা শাখা। সেই শাখার এক কর্মী সন্ধান দেন, ‘কিয়স্কে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে চলে যান, ওখানে জনধন অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে।’ কিন্তু, সমাজের প্রান্তিক মানুষ, যাঁদের অধিকাংশই নিজের নাম লিখতে পারেন না তাঁদের পক্ষে একা কিয়স্কে গিয়ে কী ভাবে অ্যাকাউন্ট খোলা সম্ভব? জবাবে আধিকারিকটি জানালেন, ‘কিয়স্কে সাহায্য করার লোক রয়েছেন।’
বিষয়টি নিয়ে ইউবিআই-এর এক পদস্থ কর্তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘জনধন প্রকল্পে অ্যাকাউন্ট না খোলার কোনও কারণই থাকতে পারে না। তবে, ব্যাঙ্কের বেশ কিছু শাখায় অডিট চলছে। কর্মী সংখ্যা কম থাকায় গ্রাহককে এক-দু’দিন পরে আসার অনুরোধ জানানো যেতে পারে। কিন্তু, অ্যাকাউন্ট খোলা বন্ধ রয়েছে বলা হলে তা একদমই ঠিক নয়। আমরা দেখছি যাতে এই সমস্যা না হয়।’ আবার এসবিআই-এর এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘এ রকম হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে শুধু এ রাজ্যের মানুষকেই কেন এই সমস্যা পোহাতে হচ্ছে? তবে কি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে আবারও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে বাংলা? মিলছে না উত্তর।