সোমবারই জানা গেছিল যে, বিজেপির সঙ্গে মতুয়াদের একাংশের মতানৈক্যর পাশাপাশি টাকার অঙ্ক নিয়ে দর কষাকষিতে প্রচারে ভঙ্গ দিয়েছেন বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর। এই কারণেই ও’দিন যোগী আদিত্যনাথের প্রচার সভায় যোগ দেননি তিনি। আর তারপর থেকেই তাঁকে নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয় রাজ্য রাজনীতিতে। তৃণমূলের আক্রমণের পাশাপাশি দলের মধ্যেও এই ঘটনার পর অনেকটা কোণঠাসা হয়ে গেছেন শান্তনু। আবার ভোটের মুখেও বনগাঁ কেন্দ্রেও অনেকটাই ব্যাকফুটে পদ্ম শিবির। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে বাধ্য হলেন ঠাকুরবাড়ির এই প্রতিনিধি। মঙ্গলবার ঠাকুরনগরে নিজের বাড়িতে চিকিৎসককে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেন শান্তনু।
সাংবাদিক সম্মেলনে শান্তনুর দাবি, সোমবার তিনি কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। শাসকদলের অপবাদের জবাব দিতেই তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘১৯ এপ্রিল থেকেই আমি পেটের সমস্যায় ভুগছি। যোগীর সভার দিন তা চূড়ান্ত আকার নেয়। তার জন্যই যোগীর সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারিনি।’ তার জন্য গতকাল দুঃখপ্রকাশও করেন শান্তনু। যোগী আদিত্যনাথ সোমবার রাজ্যে চারটি সভা করেন। শান্তনুর সমর্থনেই প্রথম সভা ছিল বনগাঁয়। কিন্তু প্রার্থী নিজে না-থাকায় যোগী শান্তনুর নাম একবারের জন্যও মুখে আনেননি। সেই প্রসঙ্গে শান্তনুর সাফাই, ‘উনি ভিন রাজ্যের মানুষ। আমাদের মতো বাঙালি নন। উনি বিজেপির হয়ে প্রচার করতে এসেছেন। সেখানে প্রার্থীর নাম নিতেই হবে এমন কথা নেই।’
যোগীর সভায় শান্তনুর অনুপস্থিতি নিয়ে শাসকদলের অভিযোগ ছিল শান্তনু অত্যন্ত লোভী। সভায় যাওয়া নিয়ে বিজেপির সঙ্গে টাকার ভাগের গন্ডগোলের জেরেই তিনি যোগীর সভায় যাননি। জেলার এক তৃণমূল নেতা হাটে হাড়ি ভেঙে জানিয়েছিলেন, লোকসভা নির্বাচনে লড়ার জন্য শান্তনু বিজেপির কাছে যত টাকা দাবি করেছিলেন তা দেয়নি দল। এই নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে দর কষাকষি চলছিল। এরই মধ্যে মনোনয়ন পেশ করেন শান্তনু। কিন্তু মতুয়া যুবারা তাঁর পাশ থেকে সরে যেতেই রণেভঙ্গ দিয়েছেন তিনি। এই কারণে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে নিন্দনীয় ভাষায় আক্রমণ করে শান্তনু বলেন, ‘জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আস্তাবলের বুড়ো ঘোড়া। আর ক’টা দিন পরে মানুষ ওঁকে ছুড়ে ফেলে দেবে।’
তবে পাল্টা জবাবে শান্তনুকে উড়িয়ে দিয়ে জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘শান্তনু অশিক্ষিত। উনি এইট ক্লাসের বিদ্যে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার হোটেলে বাসন মাজতেন। আর এখানে বলতেন অফিসার পদে চাকরি করে। ঠাকুরবাড়ির প্রণামি বাক্স থেকে যারা টাকা নেয় তাদের আমি ঠাকুরবাড়ির প্রতিনিধি হিসেবেই মানি না।’ তাঁর অভিযোগ, বারুনির মেলা থেকে টাকা লুঠপাট করেছেন শান্তনু। গাইঘাটা থানায় এই নিয়ে শান্তনুর বিরুদ্ধে অভিযোগও করা হয়েছে বলে জানান জ্যোতিপ্রিয়। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘শান্তনু যদি মনে করে থাকেন মতুয়া ধর্ম তাঁর পারিবারিক সম্পত্তি, তা হলে ভুল ভাবছেন।’ তাঁর দাবি, আগামী এক বছরে মতুয়া ভক্তরাই শান্তনু ঠাকুরদের ঠাকুরবাড়ি থেকে বের করে দেবেন। ‘আমি বুড়ো ঘোড়া না কি সেটা আগামী দু’মাসেই বুঝিয়ে দেব। জেলার পাঁচটা কেন্দ্রে বিজেপি পাঁচ আঙুলের থাপ্পড় খাবে।’ চ্যালেঞ্জ জ্যোতিপ্রয়র।