‘মায়েরা এখন রাতের বেলায় ছেলে-মেয়েদের বলছে, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়, না হলে আবার নরেন্দ্র মোদী এসে যাবে। আবার জিএসটি, আবার নোটবন্দী, আবার সর্বনাশ, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়।’ ঠিক এই ভাষাতেই গব্বর সিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তুলনা করে তাঁকে তীব্র আক্রমণ করলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। শনিবার সাঁইথিয়ায় বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী শতাব্দী রায়ের সমর্থনে জনসভা করেন ফিরহাদ। সেখান থেকেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এবং মোদীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানান তিনি।
সভায় ফিরহাদ ছাড়াও হাজির ছিলেন জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরি, বিধায়ক নীলাবতী সাহা, জেলা তৃণমূলের সহসভাপতি রাণা সিং প্রমুখ। দেশে গত ৫ বছরে যে দুরবস্থা তৈরি হয়েছে, সেইজন্য মোদীর সিদ্ধান্ত এবং নীতিই দায়ী বলে গতকাল অভিযোগ করেন ফিরহাদ। এবং তা করতে গিয়েই মোদীকে ‘শোলে’ সিনেমার ভিলেন গব্বর সিংয়ের সঙ্গে তুলনা করে ফিরহাদ বলেন, ‘এই প্রথম ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীকে সবাই গব্বর সিং বলছে। তাঁকে সকলে ভয় পাচ্ছে। মায়েরা এখন রাতের বেলায় ছেলে-মেয়েদের বলছে, তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়, না হলে আবার নরেন্দ্র মোদী এসে যাবে। আবার জিএসটি, আবার নোটবন্দী, আবার সর্বনাশ, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়।’
গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশ্যে তোপ দেগে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে ওদের এক নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিং বলেছিলেন, ভাগ মমতা ভাগ, ভাগ মুকুল ভাগ। এরপর একজনকে ভাগিয়ে নিজেদের কাছেই নিয়ে গেলেন। আর রইল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতা কে? আমরা যারা বাঙালি, তাদের ঘরের মেয়ে। আমাদের প্রতীক। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘তাঁকে বাংলা থেকে ভাগিয়ে তোমরা গুজরাট, দিল্লী, উড়িষ্যা থেকে এসে বাংলার দখল নেবে, আর বাংলার মানুষ চুপচাপ বসে দেখবে? আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে। শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি। তোমার ভয় নেই মা, আমরা প্রতিবাদ করতে জানি।’
গতকাল সাধ্বী প্রজ্ঞা ইস্যুতেও বিজেপিকে তুলোধনা করেন মন্ত্রী। তিনি পরিষ্কার বলেন, ‘সাধ্বী প্রজ্ঞা যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তাতে তাঁর প্রার্থীপদ অবিলম্বে খারিজ করা উচিত। তিনি যে দলের প্রার্থী, সেই বিজেপিকে নিষিদ্ধ করা উচিত।’ উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগেই ভোপাল কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সাধ্বী প্রজ্ঞা ওরফে প্রজ্ঞা সিংহ ঠাকুর দাবি করেন, তাঁর অভিশাপেই নাকি জঙ্গীদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে মুম্বই পুলিশের প্রাক্তম এটিএস চিফ হেমন্ত কারকারের। কারকারে দেশবিরোধী ও ধর্মদ্বেষী বলেও মন্তব্য করেছেন সাধ্বী। সাধ্বী প্রজ্ঞার এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন দেশের সকল বিরোধীরা।
মুখ্যমন্ত্রীর কথা বলতে গিয়ে ফিরহাদ বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মোদীর ব্যক্তিত্বের অনেক ফারাক। তাঁর সব সময় চিন্তা, কী করে রাজ্যের মানুষের ভাল করা যায়।’ মমতাকে মা দুর্গার সঙ্গেও তুলনা করেন তিনি। বলেন, ‘যেমন মা দুর্গাকে সমস্ত দেবতা নিজের নিজের অস্ত্র তুলে দিয়ে বলেছিলেন, যাও তুমি অসুরকে ধ্বংস করো, বিনাশ করো। তেমনই আজ ভারতবর্ষের সব থেকে বড় অসুর, যাঁর নাম নরেন্দ্র মোদী, তাঁকে ধ্বংস করার জন্য আপনারা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অস্ত্র দিন। এখানে শতাব্দী রায়কে ভোট দেওয়া মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তাঁকে শক্তিশালী করা। তাঁর হাত শক্ত করে আপনারা উন্নততর ভারতবর্ষ গড়ে তুলুন।’
এখানেই না থেমে তিনি আরও বলেন যে, ‘দেশের সব রাজ্যের ছেলেমেয়েরা যাতে কন্যাশ্রী, রুপশ্রী, যুবশ্রীর সুফল পায়, সবুজসাথীর সাইকেল পায়, দেশের সমস্ত কৃষক যাতে এরাজ্যের মতো কৃষকবন্ধু, কিসান ক্রেডিট কার্ড, কিসান মান্ডির মতো বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পায়, সেজন্যই দেশের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চায়। আপনারা সবাই তাই তৃণমূলকেই ভোট দিয়ে জেতান। তাদের দিল্লীতে পাঠান।’