২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে পর্যন্ত ভোট প্রচার হত কেবলমাত্র দেওয়াল লিখন, ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট এবং টেলিভিশন-রেডিওর মাধ্যমে। কিন্তু গতবারের লোকসভা ভোটেই প্রথম দেখা যায় যে সোশ্যাল মিডিয়াকে ভোট প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠতে। এবং তারপর থেকে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও ‘আইটি সেল’ শব্দবন্ধটি বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আইটি সেল মানে এক বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত গোষ্ঠী, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও দল, সংস্থার প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব সামলায়।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপির বাড়বাড়ন্ত হওয়ার পর থেকেই আইটি সেলের নাম খারাপ হয়েছে দ্রুত। ভুয়ো খবর, ফটোশপ করা ছবি— এসব করেই গন্ডগোল পাকাতে ওস্তাদ গেরুয়া শিবিরের এই আইটি সেল। আরও শোনা যায়, এর জন্য মাইনে করা লোকও রেখেছে বিজেপি। তাঁদের কাজই নানা বিজেপি বিরোধী পোস্টে গিয়ে আক্রমণ করা। তবে, ঘাসফুল শিবিরের ছবিটা আবার একেবারেই উল্টো। এখানে সবটাই রাজনৈতিক তাগিদ। বিজেপির মতো কোনও বেতনভুক কর্মী নন, নেত্রী ও দলকে ভালবেসেই এ কাজ করছেন সমর্থকেরা। সাইবার সেলের সদস্যরা অন্তত তেমনই জানাচ্ছেন। স্বাভাবিক ভাবে তৃণমূল কর্মীদের আবেগ আর দলের প্রতি অনুগত্যের কাছে হার মানতে হচ্ছে বিজেপিকে।
একাধিক গ্রুপ, পেজ থেকে লাখো মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে তৃণমূলের নানা প্রচার-পোস্ট। এসবের পেছনে রয়েছে দলের সাইবার সেল। ঘাসফুল শিবিরের সাইবার সেলের আওতায় থাকা অন্যতম গ্রুপের নাম অল ইন্ডিয়া তৃণমূল সাইবার কম্যান্ড। গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে কাজ করছেন দেবাশিস দত্ত, প্রশান্ত সিনহা। সেখানে রয়েছেন অসংখ্য সদস্য। জনপ্রিয় হয়েছে ‘ফ্যাম’ নামে একটি গ্রুপও। যেখানে আছেন প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ সদস্য। নির্বাচনের প্রচারে এই গ্রুপে সদস্যরা ছড়িয়ে আছেন জেলায় জেলায়।
তৃণমূল সাইবার কম্যান্ড ফোরাম (টিসিএফ) নামে একটি গ্রুপও কাজ করছে মূলত হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে, যারা ব্যক্তিগত ভাবে মানুষের কাছে তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্যুগুলি পৌঁছে দিচ্ছেন। কাজ করছেন সমীরণ চট্টোপাধ্যায়, রাখী গঙ্গোপাধ্যায়, দেবব্রত বক্সি, গোপাল কোনার, এসএম ফৈয়াজ, প্রিয়া দত্তের মতো অসংখ্য সদস্য। উল্লেখ্য, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের আইটি সেলের দায়িত্ব প্রাথমিক ভাবে তুলে দিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা তথা জাতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনকে। দায়িত্বে রয়েছেন কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরি ও সুপর্ণ মৈত্রও।
শুধু গ্রুপ নয়, একক ভাবেও জনপ্রিয় হয়েছেন বেশ কয়েকজন। যেমন ঘোষিত তৃণমূল সমর্থক ও বিজেপি বিরোধী সোশ্যাল মিডিয়া সেলেব্রিটি দেবাংশু। তাঁর তৈরি ভিডিও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে প্রায়শই ঘুরে বেড়ায়। তীব্র ভাষায় বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে তাঁর পোস্ট করা এক-একটি ভিডিও জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যায়। দেবাংশু জানান, ‘নোট বাতিলের সময় মোবাইল খুলে ভিডিও করেছিলাম। দেখলাম, অনেক মানুষ সেটা শেয়ার করছেন। তার পর থেকে একে একে ভিডিও পোস্ট করতে থাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে।’
তিনি এ-ও বলেন যে, ‘আমার মতো অনেকে আছেন যাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন করেন, কিন্তু সরাসরি রাজনীতি করতে পারেন না। তাঁরা অবসরে যে যেভাবে পারেন ফেসবুকে বিজেপির পেশিশক্তি, অর্থবলে চালিত আইটি সেলের বিরুদ্ধে ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থনে ভিডিও করেন, লেখেন। আমরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসা থেকেই দিনের পর দিন এ কাজ করে চলেছি।’ আবার বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সরব গর্গ চট্টোপাধ্যায়। শুধু ফেসবুকে নয়, ‘বাংলা পক্ষ’ নামে সংগঠন তৈরি করে তিনি মাঠে নেমে বাংলা ভাষা, বাঙালি আত্মপরিচয়ের লড়াই চালাচ্ছেন। সেখান থেকেই বিজেপির হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিশা খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান তিনি।