নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেই চলছে মোদী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক থেকে টুইটের পর টুইট। যেখানে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে অর্থ প্রদানের। গতকালও ছেদ পড়েনি টুইট-বর্ষণে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবে তারা, তা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন।
প্রসঙ্গত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, মণিপুর-সহ দেশের আট রাজ্যে অকাল বৃষ্টি আর ধুলো ঝড়ে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের নিকটতম আত্মীয়কে দেওয়া হবে দু’লক্ষ টাকা। আর আহতদের ৫০ হাজার টাকা। এমনই ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। আর ঘোষণার বিষয়টি টুইটারে জানিয়েছে পিএমও। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর দফতর। এ-ও জানানো হয়েছে, গুজরাতেও এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে পড়া ব্যক্তিদের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে টাকা দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে সরকার পাশে দাঁড়াবে, সেটাই স্বাভাবিক। তা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লাগু হয়ে যাওয়ার পরেও কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্ত্রকের টুইটার হ্যান্ডেলে প্রার্থীর ছবি থাকতে পারে? গত ১০ মার্চ লোকসভার পাশাপাশি কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পরপরই সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে সরে গিয়েছে মন্ত্রীদের ছবি। কিন্তু মন্ত্রকের টুইটার হ্যান্ডেলে তা হয়নি।
পিএমও’র টুইটারের ডিপি অর্থাৎ ডিসপ্লে পিকচারে এখনও দেখা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর ছবি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। একইভাবে রেলমন্ত্রক, সামাজিক ন্যায়, স্কিল ইন্ডিয়ার মতো কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের টুইটারের হোমপেজেও রয়েছে মোদীর ছবি। রেলের ওয়েবপেজে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের প্রচারে নরেন্দ্র মোদির ঝাড়ু হাতে জঞ্জাল সরানোর ছবি জ্বলজ্বল করছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এই সকল মন্ত্রক মানেই কি একম এবং অদ্বিতীয়ম মোদী?
কেবল ছবিই নয়। আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি পর্বে গত ৫ এপ্রিল স্কিল ইন্ডিয়ার টুইটারে এক কোটি কর্মসংস্থানের একটি প্রচার রিটুইটও করা হয়েছে। মোদীর মতোই বিজেপির লখনউয়ের প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ছবিও অফিস অব দ্য হোম মিনিস্টার অব ইন্ডিয়া, গৃহমন্ত্রী কার্যালয়ের টুইটারে এখনও জ্বলজ্বল করছে। অকাল বর্ষণের আঘাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মৃত এবং আহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা ব্যক্ত করেছেন বলে টুইটও করা হয়েছে।
রাজনৈতিক মহলের অভিযোগ, ওইসব টুইটারে অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার ফলোয়ার রয়েছে। ফলে ভোট মরশুমে একের পর এক টুইট করে তাঁদের প্রভাবিত করছেন মোদী, রাজনাথ সিংরা।
এখনও কি এভাবে মন্ত্রকের সরকারি টুইটারে লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থীদের ছবি থাকতে পারে? এটা কি আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে? জানতে চাওয়ায় ডেপুটি নির্বাচন কমিশনার উমেশ সিনহার সাফাই, ‘কমিশনের নজরেই পড়েনি বিষয়টি।’ একইসঙ্গে তিনি জানান, ‘কী করা যায়, তা কমিশন অবশ্যই ভেবে দেখবে।’
কমিশনের ব্যখ্যা, এর আগে যেসব লোকসভা নির্বাচন হয়েছে, সেসময়ে টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরেই মন্ত্রকের সোশ্যাল মিডিয়া সক্রিয় হয়েছে। তাই কমিশনের কাছেও বিষয়টি নতুন। ফলে এটি নিয়ে আদৌ ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও সুযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে নির্বাচন কমিশন।