দ্বিতীয় টার্মেও কী নরেন্দ্র মোদী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন? সেই মোদী ম্যাজিক বা মোদী লহর কিন্তু এবারে আর তেমনভাবে দেখা যাচ্ছে না। গত চার বছরের প্রায় অপ্রতিরোধ্য গতিতে ছোটা বিজেপির অশ্বমেধ ঘোড়া কয়েক মাস আগেই থমকে গেছে এমন কয়েকটি রাজ্যে, যেখানে বিজেপি’র আধিপত্য সংশয়াতীত বলে মনে করা হয়েছিল। ভোটতাত্ত্বিকদের হিসেবমতো যদি সত্যিই নরেন্দ্র মোদীর পরিস্থিতি ‘লড়লাম, জিতলাম, প্রধানমন্ত্রী হলাম’ হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং তাঁর বাহিনী কেন এত মরিয়া হয়ে উঠছেন?
বালাকোটের বিমান হানাকে যে ভাবে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দলবল ভোটের বাজারে মূলধন করছেন, তা থেকে স্পষ্ট, বালাকোটকে যে করে হোক ভোট-রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে এসে ফেলতে চায় গেরুয়া শিবির। বিজেপি নেতানেত্রীরা তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী মোদীও নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্মণরেখাকে তোয়াক্কা না করে প্রথম বার ভোট দিতে যাওয়া তরুণ-তরুণীদের আহ্বান করলেন, পুলওয়ামা ও বালাকোটকে স্মরণ করে ভোট দিতে! কেন? তবে কি প্রধানমন্ত্রী ভয় পাচ্ছেন যে দেশের বদলে নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভাবলে এই তরুণরা ভোটমেশিনে অন্য বোতাম টিপতে পারেন?
ঠিক তার পরপরই বাজারে এল ‘মিশন শক্তি’। জাতীয়তাবাদের ঢেউকে আরও উস্কে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ‘ব্রেকিং নিউজ’ দিলেন, ভারত উপগ্রহ ধ্বংস করার ক্ষমতা অর্জন করেছে! এর পাশাপাশি গতবারের স্বপ্ন দেখানো ‘চা ওয়ালা’ হয়ে গেলেন ‘চৌকিদার’। শুধুমাত্র মোদীর প্রচারের জন্য এল নমো টিভি। নির্বাচনের ঠিক মুখে মুখে, প্রধানমন্ত্রীর ওপর তৈরি সিনেমা প্রকাশের চেষ্টা হল। এখন প্রশ্ন, নরেন্দ্র মোদীর জয় যদি নিশ্চিতই হয়ে থাকে, তবে এত মরিয়া চেষ্টা কেন? তবে কি পরিস্থিতি এত সহজ সরল নয়?
ঠিক একইরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল অটলবিহারি বাজপেয়ীর জামানায়। যখন বাজপেয়ীর দ্বিতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করা হচ্ছিল, সেই ২০০৪ সালে বিজেপি সরকার মুখ থুবড়ে পড়ার আগেও কিন্তু ভারত-পাকিস্তান কার্গিল যুদ্ধ হয়েছিল, এবং তা নিয়ে যথেষ্ট জাতীয়তাবাদী প্লাবন জনমানসে ছড়ানো হয়েছিল। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, বিহারে কংগ্রেস-আরজেডি ও উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ-মায়াবতীর একসঙ্গে নির্বাচন লড়ার সিদ্ধান্তকেও। রাহুল গান্ধীর পরিপক্কতা বৃদ্ধি ও প্রিয়াঙ্কা গাঁধীর সম্মুখসমরে নামার সিদ্ধান্তও হয়তো নতুন চাপ তৈরি করেছে। কংগ্রেসের ইস্তাহারে ‘ন্যায়’-এর মতো বিষয়ের উপস্থিতি রাজনীতির সমীকরণ পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে।
আসলে মোদীর চ্যালেঞ্জটা দ্বিমুখী; প্রথমটা যদি হয় কংগ্রেস ও বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলিকে পিছনে ফেলা, তবে দ্বিতীয়টা হল ২৭২-এর ম্যাজিক নম্বরের অনেকটা কম আসন পেলে কেমন করে বাকি আসনের সঙ্গী জোটানো যায়, তা স্থির করা। অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদীর যুগলবন্দির একাধিপত্য নিয়ে তাঁদের দলের মধ্যেই অনেক প্রশ্ন উঠেছে বলে শোনা যাচ্ছে। বিজেপির আসনসংখ্যা ২৭৩ থেকে যত দূরে থাকবে, ততই সেই বিরোধিতা জোরদার হবে, বলাই বাহুল্য। এসবের ফলে মোদী এবং গেরুয়া শিবিরের এই মরিয়া প্রচার অভিযান।
