‘আমি পাহাড় ও সমতলের মধ্যে সেতুবন্ধন করতে চাই। তাই পাহাড়ের ভূমিপুত্র অমর সিং রাইকে প্রার্থী করেছি। পাহাড়ের প্রার্থী আর সমতলের প্রতীক।’ গতকাল কার্শিয়াংয়ে জনসভা থেকে এই বার্তা দিয়েই পাহাড়বাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর জনসভা সেরে ফেরার পথে তিনি যা করলেন, তাতে গোটা পাহাড়ের মনই জয় করে নিলেন মমতা। শুক্রবার কার্শিয়ায়ের সভা শেষ করে শিলিগুড়িতে নামার পথে রোহিণী চা–বাগানে শ্রমিকদের দেখে হঠাতই গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। বিকেলে বাগানের কাজ শেষ করে শ্রমিকরা ঘরে ফিরছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে এভাবে গাড়ি থেকে নেমে পড়তে দেখেই তাঁরা ছুটে আসেন। যেন তিনি তাঁদের পরিবারেরই একজন।
এরপর দু’পক্ষের মধ্যে নমস্কার বিনিময় হয়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের কাছে জানতে চান, ‘চা-বাগানে আপনারা মজুরি কত পাচ্ছেন?’ শ্রমিকদের মধ্যে কেউ কেউ জানান, ‘১৫০ টাকা।’ যা শুনে অবাক হয়ে তিনি বলেন, ‘কেন? ১৭৬ টাকা তো পাওয়ার কথা। কেন দেওয়া হচ্ছে না?’ এরপরই মালিকদের ওপর অসন্তুষ্ট হন মুখ্যমন্ত্রী। শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা চাল ঠিকমতো পাচ্ছেন তো? রাজ্য সরকার থেকে চাল দেওয়া হচ্ছে। কোথা থেকে চাল পাচ্ছেন?’ একজন বলেন, ‘এখানে রেশনের দোকান আছে।’ মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ছেলেমেয়েরা কোন ক্লাসে পড়ে? কোন স্কুলে যায়? শ্রমিকদের কাছ থেকে জবাব আসে, ‘এখানে হাই স্কুল নেই। সেভেন-এইটে পড়ে। যেতে হয় সেই কার্শিয়াংয়ে।’
চিন্তিত মমতার প্রশ্ন, ‘ওঁরা কীসে যাতায়াত করে?’ মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হয়, ছাত্রছাত্রীরা অনেকে মিলে গাড়ি ভাড়া করেই কার্শিয়াংয়ে যায়। সব শুনে নিজে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের জানান, তিনি এ ব্যাপারে শীঘ্রই কোনও পদক্ষেপ নেবেন। ফেরার সময় চা-শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে মমতার প্রতিশ্রুতি, ‘আমি নিশ্চয়ই আপনাদের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করব।’ মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি পাহাড় ছেড়ে সমতলে নামার অনেকক্ষণ পরেও হাসি লেগে থাকে পাহাড়ের মুখে। আর দিনের শেষে দিদির কথায় অনেকটা নিশ্চিন্ত হয়েই বাড়ি ফেরেন ওই চা-শ্রমিকদের দল।