সাম্প্রদায়িক দল বলে বারবারই কটাক্ষ শুনতে হয়েছে তাদের। গেরুয়া শিবিরের ধর্মীয় মেরুকরণের চেষ্টা এবং ভাগাভাগির রাজনীতি নিয়েও একধিক বার তোপ দেগেছে বিরোধীরা। আর দেশে লোকসভা ভোট চলাকালীন ফের একবার প্রকাশ্যে চলে এল বিজেপির মুসলিম বিদ্বেষ। নিজের কেন্দ্রে ভোটপ্রচারে গিয়ে বিদায়ী বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী মানেকা গান্ধী এবার কোনও রাখঢাক না রেখেই জানিয়ে দিলেন, তাঁকে ভোট না দিলে তিনিও চাকরি দেবেন না মুসলিমদের। শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ওই উস্কানিমূলক মন্তব্য ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই উঠেছে সমালোচনার ঝড়। বিরোধীদের তরফ থেকে এই ঘটনাকে ‘আরও একটা কেলেঙ্কারি’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গতকাল তাঁর এ বারের নির্বাচন কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের সুলতানপুর লোকসভা আসনের তুরাব খনি গ্রামে গিয়েছিলেন মানেকা। উল্লেখ্য, ওই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে বেশির ভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। সেখানেই একটি প্রচার সভায় ভাষণ দেওয়ার সময় বিজেপির মন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই, মুসলিমরাও আমাকে ভোট দিন। ওঁদের ভোট ছাড়া আমি জিততে চাই না। তবে ওঁদের ভাবগতিক দেখে আমি কষ্ট পেয়েছি। আমাকে যদি মুসলিমরা ভোট না দেন, তা হলে আমিও কোনও মুসলিমকে চাকরি দিতে চাইব না। তখন কোনও মুসলিম আমার কাছে এসে চাকরি চাইলে, আমাকেও ভাবতে হবে। চাকরি তো একটা চুক্তি। কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়। না হলে হয় নাকি?’
এখানেই শেষ নয়। তাঁর মিনিট তিনেকের ভাষণে তিনি এ কথাও বলেন যে, ‘মুসলিমদের বুঝতে হবে, এটা দেওয়া-নেওয়ার বিষয়। আমি আপনাদের (মুসলিম) জন্য কাজ করে যাব আর আপনারা আমাকে ভোট দেবেন না, এটা হতে পারে না। আমরা কেউই মহাত্মা গান্ধীর সন্তান নই।’ এরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় মানেকার এই বক্তব্য। ধেয়ে আসে নেটিজেনদের দিক থেকে নিন্দার ঝড়। একে একে মুখ খুলতে থাকে বিরোধীরাও। সুলতানপুরের তুরাব খনি গ্রামে মানেকার ওই উস্কানিমূলক মন্তব্যের সমালোচনা করে কংগ্রেসের তরফে বলা হয়, ‘কেলেঙ্কারি। এটা তো সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কানি দেওয়া। বিজেপি বলতে চাইছে, চাকরিটাও কিনতে হবে। এ বার বোঝা যাচ্ছে, কেন মোদী জমানায় দেশে চাকরিবাকরির এই হাল হয়েছে!’
উল্লেখ্য, এর আগে মানেকা ছিলেন উত্তরপ্রদেশের পিলিভিটের সাংসদ। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে তাঁর বহু দিনের নির্বাচন কেন্দ্র, পিলিভিট থেকেই তাঁকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। সেখান থেকে জিতেই মোদী সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এবার তাঁর সেই বহু দিনের আসন পিলিভিট ছাড়তে হয়েছে মেনকাকে। এবং সেটা তাঁর নিজের ছেলের জন্যই। বিজেপি এবার পিলিভিট আসনে মেনকা-পুত্র বরুণ গান্ধীকে প্রার্থী করেছে। এবং মানেকাকে দাঁড় করানো হয়েছে সুলতানপুর কেন্দ্র থেকে। তবে নিজের নতুন কেন্দ্রে ভোট চাইতে এসেই এবার বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন মন্ত্রী।