লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই গোটা দেশ জুড়ে বইতে শুরু করেছিল বিজেপি বিরোধী হাওয়া। যার আঁচ পড়েছিল গোবলয়ের যোগী রাজ্যেও। বৃহস্পতিবার লোকসভা ভোটের প্রথম দফায় ভোট হল পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ৮ আসনে। গতকাল যে আটটি আসনে ভোটদান পর্ব ছিল, গতবার তার সব ক’টিই জিতেছিল বিজেপি৷ কিন্তু ২০১৪-য় সম্পূর্ণই অন্য আবহে ভোট হয়েছিল সে রাজ্যে৷ কারণ মুজফফরনগরের দাঙ্গার পর জাঠেদের সিংহভাগ ভোটই সেবার বিজেপি পায়৷ সেই সঙ্গে ছিল ‘চা-ওয়ালা’ নরেন্দ্র মোদীর প্রতি সহানুভূতি৷ এই জোড়া ফলায় বিদ্ধ হেরেছিলেন বিরোধীরা৷ এই কারণেই চরণ সিং পরিবারের খাসতালুক বাগপতে অজিত সিং তৃতীয় স্থানে নেমে এসেছিলেন৷
প্রসঙ্গত, গতকাল সকাল সাতটার মধ্যেই গাজিয়াবাদের বুথে পৌঁছে গিয়েছিলেন সুনীল চাওকে৷ প্রথম ভোটার হিসাবে ভোট দিয়ে বেরিয়ে এসে তিনি দেখেন, অত সকালেই লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে৷ সবই অফিসযাত্রীর ভিড়৷ সকাল সকাল ভোট দিয়েই অফিসে দৌড়েছেন তাঁরা৷ দিল্লীর প্রতিবেশী ও রাজধানী ক্ষেত্রের মধ্যে থাকা গাজিয়াবাদ, নয়ডায় না হয় এটা স্বাভাবিক ছবি, কিন্তু পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বাকি সব কেন্দ্রেও ভাল ভোট পড়েছে প্রথম দফায়৷ আটটি কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় সব ক’টিতেই বেলা একটার মধ্যে ৪০ শতাংশ ভোট পড়ে যায়। পরে বেলা তিনটে নাগাদ ভোটের হার দাঁড়ায় ৫১-৫২ শতাংশ৷ শেষ পর্যন্ত গাজিয়াবাদ বাদ দিলে বাকি সব জায়গাতেই ভোট পড়েছে ৬২ থেকে ৭০ শতাংশ৷ গাজিয়াবাদে ভোটের হার ছিল ৫৭ শতাংশ৷
উল্লেখ্য, বিগত ৫ বছরে এই এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে৷ মুজফফরনগরের দাঙ্গার রেশ স্তিমিত৷ বরং অনেক বেশি করে উঠে এসেছে আখ চাষিদের ক্ষোভ৷ সেই সঙ্গে আবার সামনে এসে গিয়েছে জাত-পাতের অঙ্ক৷ গতবার দাঙ্গা ও মোদী হাওয়ার ফলে জাতপাতের ওপরে উঠে মানুষ ভোট দিয়েছিলেন৷ প্রশ্ন হল, এ বার পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের গ্রামে-গঞ্জ কি আবার ফিরে গিয়েছে পুরোনো অভ্যাসে? সপা-বসপা-এরএলডি-র দাবি, ঠিক সেটাই হয়েছে৷ গ্রামের লোক বেশি করে ভোট দিয়েছেন৷ আর তাতে আখচাষিদের ক্ষোভ এবং দলিত, যাদব, মুসলিম ভোট তাঁরা পেয়েছেন৷ কংগ্রেসও উচ্চবর্ণের ভোট কেটেছে৷ তাই মহাজোটই অধিকাংশ আসনে জিতবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মহাজোটের তরফে সপা প্রধান অখিলেশের দাবি, লোকে মহাজোটের সমর্থনে বেশি সংখ্যায় ভোট দিয়েছেন৷ তাঁদের সমর্থকরা উজ্জীবিত হয়ে ভোট দিয়েছেন৷ এছাড়া এটাও সত্যি যে, কৈরানা, গোরক্ষপুর, ফুলপুরের উপনির্বাচনই দেখিয়ে দিয়েছিল যে, বিজেপি আর উত্তরপ্রদেশে অজেয় নেই৷ আর তার ওপর ভোটে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের আখচাষিদের ক্ষোভের প্রতিফলন হলে যে বিজেপি এবার এই এলাকায় ধাক্কা খেতে পারে, তা বলাই বাহুল্য। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যোগীর রাজ্যে এই মুহূর্তে বেজায় অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।