দিন কয়েক আগেই নীরবতা ভেঙে মুখ খুলেছেন ভারতীয় রাজনীতির ‘লৌহপুরুষ’ লালকৃষ্ণ আডবাণী। গেরুয়া শিবিরের অস্বস্তি বাড়িয়ে তাঁর ব্লগে তিনি লিখেছেন, বিজেপি বিরোধী মানেই দেশদ্রোহী নয়। কেউ রাজনৈতিক ভাবে দলের বিরোধিতা করলেই তাঁকে অ্যান্টিন্যাশনাল বলতে হবে, এই ঐতিহ্য বিজেপির নয়। আর আডবাণীর পর এবার কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী নীতিন গাডকরির গলায় শোনা গেল সেই একই সুর। গণতন্ত্রে ভিন্নমতকে সম্মান জানানো উচিত বলে মন্তব্য করে লোকসভা ভোটের মুখে নিজের দলকেই অস্বস্তিতে ফেললেন এই প্রবীণ বিজেপি নেতা৷ তাঁর মতে, ‘রাজনৈতিকভাবে যারা ভিন্নমত পোষণ করেন তাদের সম্মান জানানোটাই প্রকৃত গণতন্ত্র৷’
প্রসঙ্গত, ঠিক একই মত পোষণ করেছিলেন বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আডবাণী৷ নিজের ব্লগে ‘নেশন ফার্স্ট, পার্টি নেক্সট, সেলফ লাস্ট’ শিরোনামে ৫০৯ শব্দের যে লেখাটি তিনি লিখেছিলেন তার সারমর্ম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বৈচিত্রকে সম্মান জানানোই ভারতীয় গণতন্ত্রের সম্পদ। রাজনৈতিক ভাবে এবং ব্যক্তিগত স্তরেও প্রত্যেক নাগরিকের পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়াই গণতন্ত্রের কাজ। জাতীয়তাবাদ এবং রাজনৈতিকভাবে কারোর সঙ্গে মতের মিল না হলেই সে দেশবিরোধী বা শত্রু নয়৷ এবার আডবাণী ঘনিষ্ঠ নীতিন গাডকরির গলাতে সেই ব্লগের প্রতিটি কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল৷
তিনিও বললেন, ‘কারোর সঙ্গে আমাদের মতের মিল না হলে তাঁকে দেশবিরোধী বলে দেওয়াটা ঠিক নয়৷ সবার মত প্রকাশের অধিকার আছে৷ এতে কারোর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়৷ কারণ গণতন্ত্রে সবসময় বিপরীত মত থাকবেই৷’ আডবাণীর ব্লগ প্রসঙ্গে গাডকরির মন্তব্য, ‘তাঁরও মত প্রকাশের অধিকার আছে৷’ যা নিয়ে ইতিমধ্যেই অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির। লোকসভা ভোট শুরু হয়ে যাওয়ার পর গাডকরির এমন মন্তব্য স্বাভাবিকভাবেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে মোদী-শাহের। তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও গাডকরির একাধিক মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিদ্রুপ করে তিনি বলেছিলেন, ‘শুধু ভাল বক্তা হলেই ভোটে জেতা যায় না। বিদ্বান হলেই মানুষ ভোট দেয় না। যিনি ভাবেন সব জানেন, তিনি ভুল।’ মুম্বইয়ের এক অনুষ্ঠানেও নাম না করে মোদীর সমালোচনায় তিনি বলেছিলেন, ‘স্বপ্ন দেখাতে নেতারা ভালবাসেন। স্বপ্ন দেখানোর নেতাকে জনতারও ভাল লাগে। কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণ না হলে জনতা তাঁকে পিটুনিও দেয়। এ জন্য সেই স্বপ্নই দেখানো উচিত, যেটি পূরণ হতে পারে। আমি স্বপ্ন দেখানোর দলে নেই।’ সম্প্রতি সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন গাডকরি। তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানে বিমানহানার ঘটনাটি নির্বাচনের সঙ্গে জড়ানো অনুচিত। এটাকে নির্বাচনী ইস্যু করা উচিত নয়।’ এই সব কিছু মিলিয়ে মোদী-শাহের সঙ্গে ক্রমশই দূরত্ব হচ্ছে তাঁর৷