কাওয়াল, উত্তরপ্রদেশের এই গ্রামের নামটি শুনলেই মনে পড়ে যায় বছর ছয়েক আগের এক মর্মান্তিক ঘটনার কথা এবং সেইসঙ্গে আরেকটি নাম। শাহনওয়াজ। ২০১৩ সালে মুজফফরনগরের কাওয়াল গ্রামের যে তরুণকে প্রাণ হারাতে হয়েছিল গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায়।
মুজফফরনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে যে রাস্তাটা সোজা বিজনৌরের দিকে যাচ্ছে, যেতে হবে একেবারে সেই পথ ধরেই। ঘড়ি ধরে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট গেলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে কাওয়াল। এই গ্রামের মানুষই এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা এবার কোনও মতেই আর বিজেপিকে ভোট দেবেন না। বদলে কেন্দ্রের নতুন সরকারের কাছে সুবিচার চাইবেন। আসলে শাহনাওয়াজের ঘটনার ছ’বছর পরেও এখনও সেই কালো দিনটির কথা আজও ভুলতে পারেননি গ্রামবাসীরা।
গলির পর গলি। তস্য গলি। সরু সরু। দু’জন মানুষের পাশাপাশি হাঁটার জো নেই। একদিকে নর্দমা। গলিগুলো সিমেন্ট বাঁধানো নয়। ইট দিয়ে তৈরি। ফলে উঁচু নিচু। এবড়োখেবড়ো। মেপে পা না ফেললে হোঁচট খেতে বাধ্য। গোলোকধাঁধার মতো সেই কাওয়াল গাঁওয়েরই এক ছোট্ট ঘরে থাকেন সেলিম আহমেদ। শাহনওয়াজের বাবা। বয়স পঁয়ষট্টি বছর। এক চোখে ছানি। ভাঙা ভাঙা গলায় তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটা কারও কোনও ক্ষতি করেনি।’
তিনি আরও বলেন যে, ‘অসাবধানে শাহনাওয়াজের মোটরসাইকেলের সঙ্গে অন্য একজনের সাইকেলের ধাক্কা লেগেছিল। দু’জনের কেউই সেভাবে আহত হয়নি। সেই থেকে কত কিছু ঘটে গেল! সারা জীবনের জন্য বদনাম হয়ে গেল আমাদের গ্রামটা। আমার তরতাজা ছেলেটিকে তো আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়! কিন্তু আমরা এবার বিচার চাই। গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার আমাদের সেই ন্যায়বিচার দিতে পারেনি। তাই আমরা ঠিক করেছি, এবার আর বিজেপিকে ভোট দেব না।’
কেন মুজফফরনগর ভোট মানচিত্রে এতটা পরিচিত হয়ে উঠেছে কার্যত কোনওরকম উন্নয়নের ছোঁয়া না পাওয়া কাওয়াল গ্রাম? কারণটা লুকিয়ে রয়েছে ওই ২০১৩ সালের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনার মধ্যেই। সাইকেল ও মোটরসাইকেলে থাকা দুই ভিন্ন গোষ্ঠীর তরুণের মধ্যে দুর্ঘটনা। তা থেকে একটি তাবৎ গোষ্ঠী সংঘর্ষ। আর সেই ঘটনার জেরেই জাঠ এবং সংখ্যালঘু ভোট বিভাজিত হয়ে যাওয়ায় আদতে সুফল লাভ করেছিল বিজেপি। কিন্তু জানা গেছে, ভোট ঘোষণা হয়ে গেলেও কখনই বিজেপির প্রার্থী এই গ্রামে ঢোকেননি। গেরুয়া শিবিরের অন্য নেতারাও পারতপক্ষে এই কাওয়ালকে এড়িয়ে চলেন।
গ্রামেরই বাসিন্দা শাহনওয়াজের পড়শি মহম্মদ ফরমানের সঙ্গে। বলছিলেন, ‘এই গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দাই দিনমজুর। কোনওকালেই এই গ্রামে গোষ্ঠী সংঘর্ষের কোনও ঘটনা ঘটেনি। সব সম্প্রদায়ের মানুষই এখানে বরাবর একসঙ্গে থেকে এসেছে, আজও থাকছে। কোথাও তো কিছু নেই! শুধুমাত্র নির্বাচনে ফায়দা লোটা যাবে বলেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব ঘটানো হয়েছিল।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের শ্লেষ, আগে মুজফফরনগর বললে বিশেষ কিছু বোঝাত না। এখন মুজফফরনগর মানেই কাওয়াল গ্রাম, মুজফফরনগর মানেই গোষ্ঠী সংঘর্ষ।