দিল্লীর মসনদ থেকে বিজেপিকে হঠাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলা মেনেই উত্তরপ্রদেশে মহাজোট গড়েছে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি ও রাষ্ট্রীয় লোকদল। যাতে কোনও ভাবেই বিরোধী ভোট ভাগ না হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এই জোট কি সত্যিই মহাজোট? নাকি শুধুই ফাঁকা আওয়াজ? এই উত্তর খুঁজতে সাড়ে ৫ বছর আগের দাঙ্গাপীড়িত মুজফফরনগরে গিয়ে দেখা গেল এখানে সরাসরি লড়াই সপা-বসপা-রালোদ জোটের প্রার্থী চৌধুরি অজিত সিংয়ের সঙ্গে ২০১৪-র বিজেপি সাংসদ সঞ্জীব বালিয়ানের। আর অজিত সিং প্রার্থী হয়েছেন বলে কংগ্রেসও এখানে প্রার্থী দেয়নি।
তবে রাজ্যের মহাবীরচকে, বিজেপির প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে স্থানীয় জেলা পরিষদের নেতা সত্যপাল পাল ২০১৩ সালের দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলে জানান, ‘নিজেকে জাঠ নেতা বলে দাবি করলেও জাঠ ভোটের একটিও পাবেন না চৌধুরি অজিত সিং। উনি বহিরাগত। দাঙ্গার পর মানুষের পাশে দাঁড়াননি।’ কিন্তু বিজেপি প্রার্থী তো মামলায় অভিযুক্ত, গ্রেফতারও হয়েছিলেন। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘ও সব তো মিথ্যা মামলা! বেশির ভাগই মিটে গেছে।’ সইসঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন, এই মুজফফরনগরেই হারতে হয়েছিল অজিত সিংয়ের বাবা দেশের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী চৌধুরি চরণ সিংকে।
এই কেন্দ্রের ৫টি বিধানসভা অঞ্চল বুধানা, চরথাবল, মুজফফরনগর, খাতৌলি এবং সরদানা সবকটিই বিজেপির দখলে। গতবার ৪ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলেন বালিয়ান। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, রাজ্যে হাওয়া ঘুরে গেছে। ১৭ লক্ষ ভোটদাতার ২৬ শতাংশ (সাড়ে ৪ লক্ষ) মুসলিম, ১৫ শতাংশ জাটব এবং ৮ শতাংশ জাঠ। সব মিলিয়ে মহাজোটের প্রার্থীর ঝুলিতে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট যাওয়ার আশায় বিরোধীরা। শহরের ফ্লাইওভার লাগোয়া অজিত সিংয়ের নির্বাচনী কার্যালয়ে দেখা মিলল সপার জাঠ নেতা প্রধান মালিক, বসপার মুসলিম নেতা সামসাদ আহমেদ ও রালোদ নেতা রঘুবীর চৌধুরিদের।
সামসাদের দাবি, ‘দলিত, মুসলিম ও জাঠ মিলিয়ে ৬০ শতাংশ ভোট চৌধুরির ঝুলিতে আসবে। তবে, জাঠ ও দলিত ভোট ভাগাভাগি হবে। যেমন, দলিতের মধ্যে একশো শতাংশ জাটব (মায়াবতীও জাটব) ভোট মহাজোটের বাক্সে পড়বে। বাকি কোরি, ধোবি, খটিকদের ভোটে ভাগ বসাবে বিজেপিও।’ সপা নেতার দাবি, কংগ্রেসের মোট ভোট ৪০ হাজার। এই ভোট বিজেপিতে যাবে না। বড়জোর এক-দু’হাজার ওদিকে যেতে পারে। বাকিটা পাবে মহাজোট। তা ছাড়া বিজেপির ডাকসাইটে বিধায়ক সঙ্গীত সোম এই আসনে প্রার্থী হতে না পেরে এখন বিক্ষুব্ধ। তিনিও বিজেপি প্রার্থীর ক্ষতি করবেন।
উল্লেখ্য, লোকসভা ভোট শুরু হতে বাকি মাত্র ৩ দিন। কিন্তু এই মুহূর্তে গোটা যোগী রাজ্যেই যে বেকায়দায় গেরুয়া শিবির, তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে সেখানের বিজেপি বিরোধী হাওয়া দেখে। শুধু তাই নয়। সেই তথ্য উঠে আসছে বিভিন্ন সমীক্ষাতেও। সম্প্রতি, ইন্ডিয়া টুডে-কার্ভির করা এক প্রাক নির্বাচনী সমীক্ষায় ফলে জানা গেছিল, ২০১৪ সালের নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি ও তার জোটসঙ্গীদের জেতা ৭৩টি আসনের মধ্যে এবারে বিজেপি পেতে পারে মাত্র ৫টি আসন। প্রসঙ্গত, রাজ্যের ৮০ লোকসভা আসনের মধ্যে গতবার বিজেপি পেয়েছিল ৭১টি আসন। এবং এনডিএ-র আসনসংখ্যা ছিল ৭৩।
আরেকটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে যে, এবার সেই আসন সংখ্যা ৩৭টি কমে ৩৬-এ দাঁড়াতে পারে। সমীক্ষায় এ-ও জানা গেছে যে বুয়া-বাবুয়ার হাওয়ায় উত্তরপ্রদেশে ক্রমশই কমছে মোদীর জনপ্রিয়তা।