‘দেশের কৃষকরা যখন ঋণ শোধ করতে না পেরে আত্মহত্যা করছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী বিদেশ ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছেন।’ বিগত ৫ বছরে বারবারই এই অভিযোগ করে এসেছে বিরোধীরা। এমনকি ‘এনআরআই’ প্রধানমন্ত্রী বলেও কটাক্ষ শুনতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু তাতে কী? এত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের পরও দেশ ভ্রমণের নেশা কমেনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। আর তাঁর ঘনঘন বিদেশ সফরের জন্য জলের মতো টাকা হচ্ছে দেশের গ্যাঁট থেকে। মোদীর বিদেশ সফরের জন্য এখনও পর্যন্ত সরকারকে ৪৪৩ কোটি ৪০ লক্ষ টাকার বিল পাঠিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া! যদিও এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ৫ বিদেশ সফরের বিমানের বিল অন্তর্ভুক্ত নয়।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও) থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানে এই তথ্য সামনে এসেছে। জানা গেছে, বিদেশ সফরের নিরিখে পূর্বসূরীদের পিছনে ফেলে দিয়েছেন নমো। ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ৪৪টি বিদেশ সফর করেছেন তিনি। আর তার খরচ বাবদ পিএমও-র কাছে ৪৪৩.৪ কোটি টাকার বিল পাঠিয়েছে পাঠিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই তা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়। প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সর্বশেষ সরকারি বিদেশ সফর হিসেবে এ মাসে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (ইউএই) যাওয়ার কথা মোদীর। সেক্ষেত্রে খরচ আরও খানিকটা বাড়বে।
উল্লেখ্য, গত বছরের শেষে রাজ্যসভায় এক সাংসদ প্রশ্ন করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এযাবৎ বিদেশ সফরে খরচ করেছেন কত টাকা? সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভিকে সিং জানিয়েছিলেন, ২০১৪ সালের জুন থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে খরচ হয়েছে ২০২১ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা। চ্যাটার্ড ফ্লাইট, বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ এবং হটলাইনের জন্য ওই অর্থ খরচ করা হয়েছে। বিমান রক্ষণাবেক্ষণের জন্য খরচ হয়েছে ১৫৮৩ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। চ্যাটার্ড ফ্লাইটের পিছনে খরচ ৪২৯ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। এবং হটলাইনের জন্য খরচ ৯ কোটি ১১ লক্ষ টাকা।
সেই সময়েই বিদেশ মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জানা গেছিল যে, প্রধানমন্ত্রীর চ্যাটার্ড ফ্লাইটের জন্য ২০১৪-১৫ সালে খরচ হয়েছিল ৯৩ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা। ২০১৫-১৬ সালে খরচ হয়েছিল ১১৭ কোটি ৮৯ লক্ষ টাকা। ২০১৬-১৭ সালের খরচ ৭৬ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা এবং ২০১৭-১৮ সালের খরচ ৯৯ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। আর ২০১৮-১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪২ কোটি টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ তার পর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে খরচ হয়েছে আরও ১৪ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা। যা নিয়ে ভোটের মুখে ফের সমালোচনায় মুখর বিরোধীরা।