গত ১০ মার্চই ভোট ঘোষণা করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আর ওই দিন থেকেই দেশজুড়ে লাগু হয়ে গেছে নির্বাচনের আদর্শ আচরণবিধি। কমিশন এ কথাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিল যে আধুনিক গণতন্ত্রে সেনাবাহিনী অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ শক্তি হিসাবে কাজ করে। তাই ভোট প্রচারে কোনও ভাবেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি দেশবাসীর আবেগকে হাতিয়ার করা যাবে না। কিন্তু তারপরেও কমিশনের নির্দেশকে অমান্য করে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ‘মোদীজি কা সেনা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। যা নিয়ে দেশজুড়ে উঠেছিল নিন্দার ঝড়। অবশেষে যোগীর ওই বিতর্কিত মন্তব্যের পাঁচ দিন পর, শুক্রবার তাঁকে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করল নির্বাচন কমিশন। তাঁকে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের কথা বলবেন না।
গত রবিবার উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে এক জনসভায় যোগী আদিত্যনাথ মন্তব্য করেন, কংগ্রেসের লোকেরা সন্ত্রাসবাদীদের বিরিয়ানি খাওয়াত। কিন্তু মোদীজির সেনা তাদের বোমা আর বুলেট খাইয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার জঙ্গীদের ঘাঁটিতে বোমা বর্ষণ করেছে। তাদের মেরুদন্ড ভেঙে গিয়েছে। এই হল কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। ফলে, বিরোধী দলগুলি তো বটেই, প্রাক্তন সেনা অফিসাররাও যোগীর ওই মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, সেনাবাহিনী অরাজনৈতিক সংগঠন। তাকে রাজনীতির মধ্যে টেনে আনা ঠিক নয়।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ নিয়ে মুখ খুলে বলেছিলেন, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে ইন্ডিয়ান আর্মিকে ‘মোদী সেনা’ বলেছেন, তা খুবই আপত্তিকর। আমাদের প্রিয় সেনাবাহিনীকে তিনি অপমান করেছেন। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদি মন্তব্য করেন, ভারতের সেনাবাহিনীকে ‘মোদীজি কি সেনা’ বলার জন্য যোগী আদিত্যনাথকে ক্ষমা চাইতে হবে। তাঁর টুইট, ইন্ডিয়ান আর্মি কোনও প্রচার মন্ত্রীর প্রাইভেট আর্মি নয়। তিনি যোগীকে এ কথাও মনে করিয়ে দেন যে, ১৯৯৯ সালে জঙ্গীরা আই সি ৮১৪ নম্বরের একটি বিমান ছিনতাই করে। সেই বিমানের যাত্রীদের উদ্ধার করার জন্য জঙ্গি নেতা মাসুদ আজহারকে জেল থেকে ছেড়ে কন্দহরে পৌঁছে দিয়ে আসা হয়েছিল।
সেইসঙ্গে প্রিয়াঙ্কার প্রশ্ন, এখন যিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, সেই অজিত দোভাল ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করেছিলেন যাতে মাসুদকে মুক্তি দেওয়া হয়। আমরা সেকথা কীভাবে ভুলে যাব? এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রাক্তন সেনা কর্তা ভি কে সিং সুদ্ধু বলেছিলেন, ভারতীয় সেনা কোনও ব্যক্তি বিশেষের সম্পত্তি নয়। তা পুরো জাতির সম্পত্তি। নৌবাহিনীর প্রাক্তন কর্তা এল রামদাস নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেন তারা যেন খতিয়ে দেখে যোগীর মন্তব্যে আদর্শ আচরণ বিধি ভাঙা হয়েছে কিনা। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবারই নির্বাচন কমিশন যোগীর কাছে ওই মন্তব্য নিয়ে ব্যাখ্যা চায়। আর এবার তাদের তিরস্কারের ফলে ভোটের মুখে নতুন করে অস্বস্তিতে পড়েছে গেরুয়া শিবির।