লোকসভা ভোটের মুখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিরোধীরা যখন দিল্লীর মসনদ থেকে মোদী সরকারকে হঠাতে উঠেপড়ে লেগেছে, তখন খোদ দিল্লী লাগোয়া এক গ্রামেই নিষিদ্ধ হল বিজেপি নেতা-নেত্রীদের প্রবেশ। ওই গ্রামের বাইরে বড় বড় পোস্টারে লেখা হল, ‘মহেশ শর্মার দত্তক নেওয়া এই গ্রামে বিজেপি কর্মীদের প্রবেশের অনুমতি নেই।’ না, এই লেখা ছত্তিশগড়ের কোনও মাওবাদী প্রভাবিত এলাকার নয়। রাজধানীর গা লাগোয়া গৌতম বুদ্ধ নগর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কাছেরা গ্রামের ঘটনা। পাঁচ বছর আগে মোদী ঝড়ে শামিল হয়ে গৌতম বুদ্ধ নগর বিজেপি প্রার্থী মহেশ শর্মাকে মনোনীত করে গ্রামবাসীরা। দীর্ঘদিনের বিএসপি সাংসদ পরাজিত হন। সমস্যা তারপর থেকেই।
প্রসঙ্গত, কাছেরা গ্রামটি ধুমধাম করে দত্তক নিয়েছিলেন মহেশ শর্মা। কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে ভুল করেও গ্রামে আসেননি সাংসদে। এলাকায় উন্নয়নের কোনও নামগন্ধ নেই। উল্টে পরিষেবা আরও খারাপ হয়েছে। বরং গ্রামবাসীদের জমিতে রিয়েল এস্টেটের রমরমা বেড়েছে। এরই বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন কাছেরা গ্রামের বাসিন্দারা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে রিয়েল এস্টেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ৮৬ জন গ্রেফতার হন। এরপরই আগুনে ঘি পড়ে। তখন থেকে লাগাতার আন্দোলন চলছে। গ্রামবাসীরা রীতিমতো কোমর বেঁধেছেন, কোনও বিজেপি নেতা-কর্মীকে গ্রামের ত্রিসীমানায় আসতে দেবেন না।
কাছেরা গ্রামের আন্দোলনের প্রভাব সমগ্র গৌতম বুদ্ধ নগর লোকসভা কেন্দ্রে পড়েছে। যদিও এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক বলে চিহ্নিত করেছেন বিজেপি প্রার্থী মহেশ শর্মা। তাঁর বক্তব্য, বিরোধী দল ষড়যন্ত্র করে গ্রামবাসীদের তাঁর বিরুদ্ধে উস্কে দিচ্ছে। এতে লাভ হবে না। ভোটে জয় বিজেপিরই হবে। মূলত দলিত অধ্যূষিত কাছেরা গ্রামে মোট সাড়ে চার হাজার ভোটার। গত লোকসভা নির্বাচনে কাছেরা গ্রামের সব ভোট ব্রাহ্মণ প্রাথী মহেশ শর্মার দিকেই যায়। জয়ের পর কাছেরা গ্রাম দত্তক নেন মহেশ শর্মা।
স্থানীয় গ্রামবাসী ধর্মপাল সিং দাবি করেন, গত পাঁচ বছরে মাত্র একবার গ্রামে এসেছেন বিজেপি এমপি। উনি রাস্তা, পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিষেবা, কমিউনিটি সেন্টার, একটি ডিগ্রি কলেজ, একটি খেলার মাঠ এবং শ্মশানে অত্যাধুনিক চুল্লি তৈরির মতো একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে এর একটিও হয়নি। কংক্রিটের রাস্তা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেটি এমনভাবে হয়েছে, যে বৃষ্টি হলেই জলে ডুবে যায় গ্রাম। বিদ্যুৎ সবার ঘরে পৌঁছেছে। কিন্তু আগে ৪০০ টাকা বিল আসত। এখন আসে প্রায় ২ হাজার। প্রাক্তন এবিভিপি কর্মী ২৮ বছরের কুলদীপ নগরের অভিযোগ, ফ্ল্যাট তৈরির জন্য গ্রামবাসীদের জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলাম। বদলে পুলিসের হাতে মার খেতে হয়েছে। বিজেপি কর্মী বলেও রেহাই দেয়নি।
সাংসদ মহেশ শর্মা অবশ্য এ নিয়ে সাফাই গেয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, জনগণ আমার বিরুদ্ধে নন। তাঁরা রাজ্য সরকার এবং প্রশাসনের ওপর ক্ষুব্ধ। জমির বদলে রাজ্য সরকার যা ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল, তা পর্যাপ্ত নয়। আমি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রেখেছি। আর তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে এক ঘনিষ্ঠের যুক্তি, উনি কেন্দ্রের মন্ত্রী হিসেবে ৩২টি দেশে গিয়েছেন। এত ব্যস্ততার মধ্যে নিজের কেন্দ্রের হাজারটির বেশি গ্রামে যাওয়ার প্রত্যাশা করাটাই অনুচিত। কিন্তু এখানেই উঠছে প্রশ্ন। স্থানীয় সাংসদ ৩২টি দেশ ঘুরতে পারছেন, কিন্তু নিজের কেন্দ্রে আসতে পারছেন না? যেখানে নিজেই তিনি গ্রামটিকে দত্তক নিয়েছেন! মিলছে না উত্তর। ক্ষোভ বাড়ছে গ্রামবাসীদের।