এ রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতার পথে না হেঁটে ‘একলা চলো রে’ নীতি নিয়েছে বামেরা। কারণ অনেক দর কষাকষির পরেও বাংলায় কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার স্বার্থে পুরুলিয়া বা কোচবিহারের মতো কোনও আসন ছাড়তে তাদের প্রবল আপত্তি ছিল। আবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে বামফ্রন্ট শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক যে সেই জোটে থাকবে না, তাও জানিয়ে দিয়েছিল সে দলের নেতারা। এরপরেই মূলত ভেস্তে যায় বাম-কংগ্রেসের সমঝোতার পরিকল্পনা। কিন্তু এবার সেই ফরওয়ার্ড ব্লকেরই জাতীয় সম্পাদক জি দেবরাজনকে দেখা গেল কেরালায় স্বয়ং কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর সঙ্গে মালয়ালি জনতার অভিবাদন নিতে নিতে চলেছেন!
ওয়েনাড লোকসভা আসনের কংগ্রেস প্রার্থী রাহুল বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন মনোনয়ন জমা দিতে। ওয়েনাডের জেলাসদর কালপেট্টার স্কুলমাঠে রাহুল ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার চপার নামার অপেক্ষায় কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গেই দাঁড়িয়েছিলেন দেবরাজন! শুধু তাই নয়, জেলাশাসকের হাতে মনেনায়নপত্র তুলে দিয়ে কলাপেট্টায় যখন রাহুলের রোড-শো শুরু হয়, তখন হুডখোলা গাড়িতেও রাহুল-প্রিয়াঙ্কাদের পিছনে ফব-র সর্বভারতীয় নেতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়! সঙ্গে হাজির ছিলেন আর এক বাম শরিক আরএসপির কেরল রাজ্য সম্পাদক শিবু বেবি জনও! আরএসপি অবশ্য কেরলে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ফ্রন্ট ইউডিএফের শরিক। বিদায়ী সংসদে আরএসপির একমাত্র প্রতিনিধি এন প্রেমচন্দ্রন কংগ্রেস ফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবেই কেরালার কোল্লম থেকে নির্বাচিত। কিন্তু ফব?
দেবরাজনের সাফাই, ‘কেরলের রাজনীতিতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউডিএফ এবং সিপিএমের নেতৃত্বে এলডিএফ— এই দুই শিবিরের মধ্যে মেরুকরণ আছে। কোনও না কোনও শিবিরের সঙ্গে না থাকলে পৃথক ভাবে এখানে এঁটে ওঠা মুশকিল। সিপিএমকে বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা আমাদের এলডিএফ-এ নেয়নি।’ কিন্তু তাঁরা তো ইউডিএফ-এরও শরিক নন? লোকসভায় কোনও আসন তো কংগ্রেস তাঁদের লড়তে দেয়নি? অস্বস্তি এড়াতে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘ওরা ঘোষণা করেছেন, ইউডিএফ-এ আমাদের আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগ দেওয়ানো হবে। লোকসভায় আসন পাওয়া সহজ নয়। বিধানসভা ভোটের সময়ে অবশ্যই আমরা লড়ার আসন পাব।’ উল্লেখ্য, মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে দেবরাজনদের কাছে সহযোগিতাও চেয়েছেন রাহুল। বাংলায় নরেন চট্টোপাধ্যায়েরা অবশ্য সোমেন মিত্রদের সঙ্গে আলোচনাতেই রাজি ছিলেন না। যদিও দেবরাজনের যুক্তি, ‘দুই রাজ্যের পরিস্থিতি আলাদা।’
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটের জন্য প্রকাশিত ফব-র নির্বাচনী ইস্তেহারেও তাদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব স্পষ্ট! ইস্তেহারে দলের কৌশল সংক্রান্ত পরিচ্ছেদে লেখা আছে, তারা বাম ঐক্য দৃঢ় করতে চায় এবং ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ঐক্য চায়। ফ ব-র নিজস্ব রাজনীতির বার্তা ছড়িয়ে দিতে স্বাধীন ভাবে লড়তে চায়, আবার বিজেপি-বিরোধী ভোটকে এক জায়গায় আনতে যা করণীয়, করতে চায়! এমন বহুমুখী লক্ষ্য থেকেই বাংলা এবং কেরালায় তারা গিয়েছে সম্পূর্ণ দুই পথে। শরিক দলকে কটাক্ষ করে সিপিএমের এক নেতার মন্তব্য, ‘বাংলায় আমরা কংগ্রেসকে পাশে চেয়েছিলাম, ওরা চায়নি। কেরালায় আমরা কংগ্রেসের বিপক্ষে, ওরা পক্ষে। তার মানে ওরা কি আসলে আমাদেরই বিপক্ষে!’ এর থেকেই স্পষ্ট আন্দাজ করা যায় যে লোকসভা ভোটের মুখে এসে ক্রমশই চওড়া হচ্ছে বাম ঐক্যের ফাটল। প্রকাশ্যে চলে আসছে বামেদের শরিকি কোন্দল।