মানুষের মমতা

মোদি নামে চৌকিদারটি যে মিথ্যাচার করেন তা দেশবাসী এতদিনে জেনে গেছেন। আজ শিলিগুড়ি ও কলকাতার নির্বাচনী জনসভায় সেই মিথ্যাচারের নমুনা দেখে রাজ্যবাসী আরেকবার অবাক হয়েছেন। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি বলেছেন, স্পিডব্রেকার। মানে তার জন্যই রাজ্যের উন্নয়নের গতি রুদ্ধ হচ্ছে। রাজ্যের মানুষ নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জানে কথাটা নির্জলা মিথ্যা। আজ কোচবিহারে দিনহাটার সভাতে মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং এই মিথ্যার জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলার মানুষ এখন ২ টাকা কিলোর চাল পায়; কৃষকদের শস্যবীমার সব টাকা রাজ্য সরকার দেয়; গত সাত বছরে বাংলায় ৪০শতাংশ বেকারত্ব কমেছে; মেয়েরা এগিয়েছে বলেই লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ৪১ শতাংশ মহিলা প্রার্থী দিতে পেরেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। তাহলে রাজ্যের অগ্রগতি ও উন্নয়নের গতিতে বাধা পড়লো কোথায়? মোদির স্পিডব্রেকার কথাটা তো এসব কাজগুলি ভুল প্রমাণ করে দিল!
এই প্রতিটি সাফল্যই দেশের মানুষ তো বটেই এমনকি কেন্দ্রীয় প্রশাসনও স্বীকার করেছেন। উল্টো দিকে যে উত্তরবঙ্গে এসে মোদি তার সাফল্যের যে হিসেব পেশ করলেন সেখানকার স্থানীয় মানুষ জানেন তা ঠিক নয়। রাজবংশীদের কোন সমস্যার সমাধান তিনি করেন নি, শুধু দিল্লিতে তাদের নেতাদের ডেকে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা আশ্বাস তিনি দিয়েছেন। দার্জিলিং এর চা বাগানের শ্রমিকদের সমস্যাও তিনি মেটান নি। সভায় যে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কথা মোদি বললেন রাজ্যে সরকারের স্বাস্থ্যসাথী তার তুলনায় অনেক ভালো প্রকল্প।
দীর্ঘদিন সাংবাদিকতা করার সূত্রেই আমি জানি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের কোন প্রধানমন্ত্রী তো বটেই এমনকি কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরাও বাংলাকে এতটা পাত্তা দিত না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে বাংলা তার হারানো গুরুত্ব ফিরে পেয়েছে। দেশের বিরোধী রাজনীতি এখন বাংলাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী এবং তার দলের নেতারা মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণের মধ্যে দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছেন বাংলাই তাদের প্রধান শত্রু। কারণ, বাংলাই মোদি-অমিতদের রুখে দিয়েছে। দিনহাটার জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাংলায় কংগ্রেস, সিপিএম কারও সঙ্গে বিজেপির লড়াই নেই। এখানে লড়াই সরাসরি তৃণমূল বনাম বিজেপি। অন্য কাউকে ভোট দেওয়া মানে ভোটটা নষ্ট করা।
আমার মনে হয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে স্পিডব্রেকার আখ্যায় ভূষিত করে মোদি আদতে দিদির প্রতিরোধের ক্ষমতাটাকেই স্বীকার করে নিলেন। এই লড়াই শুরু করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী একাই। সঙ্কীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে তখন তার পাশে কংগ্রেস, সিপিএম কেউই দাঁড়ায় নি। বিজেপির অন্যায়, দুর্নীতি ও বিভেদপন্থার বিরুদ্ধে দিদিই সব থেকে আগে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এ রাজ্যের মানুষ তো বটেই গোটা দেশের মানুষ তা জানে। তাই তাকে নিজের নামের আগে চাওয়ালা কিংবা চৌকিদারের মত কোন বিশেষণ বসিয়ে নিজেকে গরীব মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিতে হয় না। সাধারণ শাড়ি, হাওয়াই চপ্পল, টালির চালের বাড়ির বাসিন্দা সব মিলিয়ে তৃণমূল নেত্রীর সাদামাটা জীবনযাপন তার প্রতি মানুষের বিশ্বাস বাড়িয়ে তুলেছে। পড়নে দামি কোট-জুতো-চশমা, ঘন ঘন বিদেশ সফর, ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতিওয়ালা মোদিবাবু তার আন্তরিকতা, সাহস আর নিষ্ঠার সামনে দাঁড়াতেই �পারেন না। এই জায়গাটাতেই মোদি-অমিতদের মত রাজনীতিবিদরা তার কাছে হেরে যান। ������
দীর্ঘদিন পর গোটা দেশকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় পথ দেখালো বাংলা। দেশকে ভাঙার নীতির বিরোধিতা এবং উন্নয়নের প্রশ্নে একটা সঠিক বিকল্প তুলে ধরেছেন তৃণমূল নেত্রী। অবস্থার সামাল দিতে না পেরে মোদি-অমিতসহ বাঘা বাঘা বিজেপি নেতা, চিত্রতারকা, বক্তাদের বাংলায় নির্বাচনী প্রচারে কর্মসূচি তৈরি করতে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে দিনহাটায় এসেছি। খবর পেলাম কলকাতার ব্রিগেডে হ্যাঙার, এলইডি টিভি, নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়া তেমন কোন চমক ছিল না। পরপর চমকের ঠ্যালায় তার চমকের ঝুলিও বোধহয় এখন ফাঁকা হয়ে এসেছে। দিনহাটার সভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একটা চমৎকার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন সার্জিকাল স্ট্রাইক, এয়ার স্ট্রাইক এবং মিসাইল স্ট্রাইকের পর মোদি এবার ভোটার স্ট্রাইক দেখবেন। দেশের ভোটদাতাদের প্রত্যাখ্যানে বিধ্বস্ত বিজেপির শেষের সেদিন দেখার জন্য দেশের মানুষকে ২৩মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ভোটের ফল ঘোষণার পর মোদি বুঝবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পিডব্রেকার নয়, স্পিডমেকার। প্রতিরোধ ও উন্নয়ন দুটি ক্ষেত্রেই তার গতির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া অসম্ভব।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত