সম্প্রতি উত্তর মহারাষ্ট্রের বাগলান তালুকে ৪৪ বছর বয়সি চাষি তাতিয়াভাউ খেরনার তাঁর পেঁয়াজ ক্ষেতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। তাঁর আত্মীয়েরা দাবি করেছিলেন, ৫০০ কুইন্টাল পেঁয়াজ মজুত রেখেও বিক্রি করতে না পারায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি। আবার ওই একই সময়ই আত্মঘাতী হওয়া ৩৩ বছর বয়সি মনোজ ধনদাগের মৃত্যুর পিছনে কারণও এক। মনোজও নিজের ক্ষেতে বসেই বিষ খান। পরে মৃত্যু হয় তাঁর। মোদী সরকারের ৫ বছরের সালতামামি ঘাটলে দেখা যাবে এমনই অনেক কৃষকমৃত্যু বা আত্মহত্যার ঘটনার ছবি।
প্রসঙ্গত, এক সময় মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে খরা প্রবণ জেলা ইয়াবৎমালে স্ত্রী এবং ৪ সন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছিলেন সাহেবরাও কার্পে। সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছিলেন, ‘কৃষক হয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব।’ তদন্তে উঠে আসে, ইঁদুর মারার জিঙ্ক ফসফেট খাবারে মিশিয়ে প্রথমে স্ত্রী, ৪ সন্তান, তারপর সেই খাবার খেয়ে আত্মঘাতী হন নিজেও। সাহেবরাওয়ের ঘটনাটি উল্লেখ করার কারণ, তিন দশকেরও বেশি আগের এই ঘটনাটিকে মহারাষ্ট্রে প্রথম কৃষক আত্মহত্যা হিসেবে ধরা হয়।
সাহেবরাওয়ের মৃ্ত্যুর পর ৩৩ বছর কেটে গেছে। কিন্তু সেই ট্র্যাডিশন দেশে আজও সমানে তালে চলছে। বিগত ৫ বছরে ক্রমশই খারাপ থেকে খারাপতর হয়েছে কৃষকদের জীবন। মহারাষ্ট্রের সীমানা টপকে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা এখন জাতীয় সমস্যা। সাহেবরাওয়ের সুইসাইড নোট, ‘কৃষক হয়ে বেঁচে থাকা অসম্ভব’, সারা দেশে আজও একইরকম সত্যি। এরই মধ্যে আরও একটি ভোটের মুখে দেশ। বিজেপির নেতা-নেত্রীদের নিত্য নতুন প্রতিশ্রুতি ও জুমলায় ফের সরগরম বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র। কিন্তু দেশের অন্নদাতারা যে ভালো নেই, তা নিয়ে মুখে টু শব্দটিও করছেন ন মোদী-শাহরা।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সারা দেশে ১১,৭৭২ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৪ সালে সেই সংখ্যাটাই বেড়ে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ১২,৩৬০। সে বছর ৫,৬৫০ জন কৃষক এবং ৬,৭১০ জন কৃষি শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৫ সালে কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা ১২,৬০২ (৮,০০৭ জন কৃষক এবং ৪,৫৯৫ জন কৃষি শ্রমিক)। প্রতি বছরই বেড়ে চলেছে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ২০১৫ সালের পর থেকে এনসিআরবি কৃষক আত্মহত্যার আর কোনও রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। আর তার একমাত্র কারণ, কৃষকের দুর্দশার এই করুণ ছবি ‘আচ্ছে দিনে’র প্রচারের আড়ালে চেপে রাখতে চায় দেশের সরকার। এমনকি, ২০১৫ সালের পর থেকে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো কৃষক আত্মহত্যার কোনও তথ্য প্রকাশ না করার মানে মোদী জমানায় কোনও কৃষক আত্মহত্যা করেনি। সংসদে দাঁড়িয়ে এমন হাস্যকর দাবিও করেছিলেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিং।
শেষমেশ ২০১৬ সালে কৃষক আত্মহত্যার পরিসংখ্যান নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের মুখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সংসদের বাজেট অধিবেশনে জানায়, সমস্ত তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়নি। কিন্তু তার ক’দিন বাদেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সংসদে একটি রিপোর্ট পেশ করে জানায়, ২০১৬ সালে ৬,৩৫১ জন কৃষক এবং ৫,০১৯ জন কৃষি শ্রমিক আত্মঘাতী হয়েছেন। তারপর থেকে এবিষয়ে আর কোনও সরকারি রিপোর্ট দিনের আলো দেখেনি।
সরকার কৃষক আত্মহত্যার রিপোর্ট প্রকাশ না করলেও, বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলে। তেমনই একটির রিপোর্ট বলছে, কেবল মহারাষ্ট্রেই শেষ পাঁচ বছরে (২০১৪-২০১৮) ১৪,০৩৪ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিদিন ৮ জন করে কৃষক আত্মঘাতী হচ্ছেন শুধু মহারাষ্ট্রে। ২০১৭ সালের জুন মাসে কৃষকদের দাবিদাওয়া মেনে নিয়ে সেই রাজ্যের সরকার ৩৪ হাজার কোটি টাকার কৃষি ঋণ মকুবের পরও মহারাষ্ট্রে অন্তত ৪,৫০০ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন।
মহারাষ্ট্রের পরেই দু’নম্বরে রয়েছে তেলেঙ্গানা। এ…