দুর্নীতির অভিযোগ বিজেপির বিরুদ্ধে নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময়ে নানা রকম দুর্নীতিমূলক কাণ্ড-কারখানায় নাম জড়িয়েছে বিজেপির। তবে এবার সামনে এল বিজেপির বিরুদ্ধে উঠে এল এক মারাত্মক অভিযোগ। সামনে এল এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের স্টিং অপারেশনের একাধিক ভিডিও ফুটেজ, যাতে দেখা যাচ্ছে বিজেপির সাংসদ উদিত রাজ থেকে শুরু করে ভরতপুরে বিজেপির সাংসদ বাহাদুর সিং কোলেকে। তবে এখন খবর এই ভিডিও-র সত্যতা যাচাই করেনি।
স্টিং অপারেশনটির নাম রাখা হয়েছে ‘অপারেশন ভারতবর্ষ’। ভোটের সময় প্রচারের জন্য কত টাকা খরচ হয়? সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করতে কত টাকা লাগে? কীভাবে নির্বাচন কমিশনের চোখে ধুলো দিয়ে সেই টাকা পাচার করা হয়? কোথা থেকে সেই টাকা আসে? এই সমস্ত প্রশ্নের অকপট উত্তর দিতে দেখা গিয়েছে বিজেপির সাংসদদের।
নির্বাচনে প্রচার করতে টাকার ব্যবহারে উত্তর–পশ্চিম দিল্লির বিজেপি সাংসদ উদিত রাজ বেশ এগিয়ে। স্টিং অপারেশনে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, নির্বাচন কেবল কালো টাকা দিয়ে লড়া হয়! রাজনীতিতে কেউই সৎ নয়। যে সবচেয়ে সৎ হওয়ার দাবি করেন, তিনিই সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত। গত লোকসভা নির্বাচনে খরচ করেছিলেন ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা। এমনকি তিনি এটাও বলেছেন, জিএসটি এবং নোটবাতিলে কালো টাকা উদ্ধার না হলেও দেশের ব্যবসা–বাণিজ্যে এই দু’টির খারাপ প্রভাব পড়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, আসন্ন নির্বাচনেও কালো টাকা দিয়েই লড়বেন।
একইভাবে মহারাষ্ট্রের ওয়ারদার বিজেপি সাংসদ রামদাস টাডাস বলেন, টাকার বিনিময়ে সংসদে যে কোনও প্রশ্ন করবেন তিনি। এমনকি নোটবাতিলে কালো টাকার উপর যে কোনও প্রভাব পড়েনি, সেকথাও বলেন। শুধু তাই নয়, আসন্ন নির্বাচনে ২৫ কোটি টাকা খরচ করতে তৈরি তিনি। এছাড়া দলের কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকা পাওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন স্টিং অপারেশনে। নির্বাচনেও কালো টাকা দিয়েই লড়বেন বলে উল্লেখ করেছেন ওই ভিডিওতে।
ভিডিওটিতে রাজস্থানের ভরতপুরের বিজেপি সাংসদ বাহাদুর সিং কোলেকে বলতে দেখা গিয়েছে, ভোটে জিততে মোট খরচ হয় ২ থেকে ৩ কোটি। এর মধ্যে ১ কোটি টাকা দলের কাছ থেকে পাওয়া যায়। তবে অর্ধেক টাকা অর্থাৎ ৫০ লক্ষ টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে তাঁর হাতে আসে। এই টাকা পাচারের জন্য সাধারণত অ্যাম্বুলেন্স বা পুলিসের গাড়ি ব্যবহার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বা কোনও বড় নেতার রোড শো থাকলে ৮০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ করা হয়।
২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে জেতার জন্য ৩ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন বাহাদুর সিং। নির্বাচনী প্রচারে ৮০০ গাড়ি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর প্রত্যেক গাড়িপিছু খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। এছাড়া তিনি আরও বলেন, নোটবাতিলের কোনও প্রভাব নির্বাচনী প্রচারে পড়বে না। হাওয়ালার মাধ্যমে টাকা ঠিকই পৌঁছে যাবে। আর নির্বাচন কমিশনের নজর এড়াতে ব্যবহার করা হয় অ্যাম্বুলেন্স এবং পুলিসের গাড়ি। শুধু ২০১৪ নয়, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনেও এভাবেই কালো টাকায় ভর করেই ভোটে জিততে তৈরি তিনি।
ভোটের আগে এই ভিডিও কার্যত বিজেপির মুখোশ ছিঁড়ে দিল। আজ সকাল থেকেই এই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অভিযুক্তদের এই প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা এড়িয়ে যান। প্রশ্ন উঠছে তাঁরা যদি সত্যিই কিছু না করেন তো চুপ কেন থাকছেন তাঁরা! কার্যত ছি ছি অব উঠেছে এই ভিডিও সামনে আসার পরে।