রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের মতোই এই মুহূর্তে গোটা দেশের বিজেপি বিরোধীদের পাখির চোখ একটাই। একজোট হয়ে দিল্লীর মসনদ থেকে সাম্প্রদায়িক মোদী সরকারকে হঠিয়ে আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে কেন্দ্রে অবিজেপি সরকার গঠন। ভোট যত এগিয়ে আসছে, ততই আরও সুর চড়াচ্ছে তারা। অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর বিশেষ আমন্ত্রণে আজ, রবিবারই যেমন বিশাখাপত্তনমে যাচ্ছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা দেশে বিজেপি বিরোধীতার প্রধান মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছাড়াও সভায় হাজির থাকার কথা আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ফারুক আবদুল্লা, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের নেতাদের। এ ছাড়া, থাকার কথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বর্তমানে মোদীর তীব্র সমালোচক অরুণ শৌরিরও।
চন্দ্রবাবুর দলের সমর্থনে এটি নির্বাচনী প্রচারসভা হলেও এখান থেকেই মহাজোটের পুনরুজ্জীবন ঘটতে চলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তৃণমূল, তেলুগু দেশম, আপের মতো যে সব আঞ্চলিক দল মহাজোটে সামিল হয়েছে, তার মধ্যে সাংসদ সংখ্যার নিরিখে তৃণমূলই বৃহত্তম। বেশির ভাগ প্রাক-নির্বাচনী সমীক্ষা অনুযায়ী, লোকসভা ভোটে এ বারও অন্তত ৩০-৩৫টি আসন পেতে চলেছে তৃণমূল। সেখানে চন্দ্রবাবুর রাজ্যে এতগুলি লোকসভা আসনই নেই। বহু আঞ্চলিক দলের পক্ষে তৃণমূলের আসন সংখ্যা টপকে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। ফলে ভোটের পর মহাজোটের রাশ থাকবে মমতার হাতেই, এটা এক রকম নিশ্চিতই।
প্রসঙ্গত, কলকাতায় ব্রিগেডের সমাবেশে মহাজোটের নেতাদের হাজির করিয়ে বিজেপিকে ভোটের আগে প্রথম চ্যালেঞ্জটা তিনিই ছুড়েছিলেন। সেখান থেকেই জন্ম নেয় ইউনাইটেড ইন্ডিয়ার ধারণা। সে দিনই মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, জোটের প্রয়োজনে তিনি ভিন রাজ্যেও প্রচারে যাবেন। সেই মতো আজ, রবিবার দুপুরে মমতার কলকাতা থেকে বিমানে বিশাখাপত্তনম পৌঁছনোর কথা। তিনি সমুদ্র-তীরবর্তী কোনও একটি হোটেলে উঠবেন বলেই আপাতত ঠিক রয়েছে। মহাজোটের বাকি নেতাদের জন্যও হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সভা শুরুর আগে মমতার সঙ্গে আলাদা ভাবে বৈঠকে করবেন চন্দ্রবাবু, কেজরিওয়ালরা। বিশাখাপত্তনম শহরের ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী মিউনিসিপ্যাল স্টেডিয়ামে এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরম বলে সভা শুরু হবে সন্ধে ছ’টার পর। সেই মতো শনিবার সকাল থেকে মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু হয়েছে।
উল্লেখ্য, দিনকয়েক ধরেই সে রাজ্যে তেলুগু দেশম পার্টির কর্মীরা প্রচার করছেন। মমতার নামে সেখানে সকাল-সন্ধ্যা স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। কাট আউটও লাগানো হয়েছে তাঁর। রয়েছে পতাকা, ফেস্টুন, ব্যানার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে ঘন ঘন সভাস্থল পরিদর্শনে আসছেন পুলিশকর্তারা। সবমিলিয়ে মমতাকে স্বাগত জানাতে তৈরি বিশাখাপত্তনম। গতকাল টিডিপি নেতা তথা হজ কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল রহমান বলেন, কলকাতায় তাঁর অনেক বন্ধু আছেন। দিদিকে অনেক দিন থেকেই চেনেন। টিভিতে অনেকবার তাঁর ভাষণও শুনেছেন। সেই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘মমতা এবার দেশের প্রধানমন্ত্রীও হতে পারেন। ওঁর মধ্যে সেই গুণ রয়েছে।’ উল্লেখ্য, এই প্রথম বিশাখাপত্তনমে সভা করতে চলেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাই আজ সভা থেকে মমতা কী বার্তা দেন, তা শোনার অপেক্ষায় অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ গোটা দেশ।