গোটা দেশের মতো বাংলাতেও প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে থেকেই গেরুয়া শিবিরে শুরু হয়ে গিয়েছে গোষ্ঠীকোন্দল। তারপর দীর্ঘ টালবাহানার পর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হতেই সেই কোন্দল এখন চরমে। কার্যত, প্রার্থী তালিকা ঘোষণার ঢের আগে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, রাজ্য বিজেপির কোনও পদাধিকারীকে প্রার্থী করা হবে না। কিন্তু তবুও টিকিট না-পাওয়ার প্রাথমিক ধাক্কা রাজ্য বিজেপির পদাধিকারীরা এখনও সামলে উঠতে পারেননি। দলের অন্দরে তাঁরা ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলছেন, ‘দলে আছি এইটুকুই। ঘরের খেয়ে আর বনের মোষ তাড়াব না।’ ফলে ভোটের মুখে তাবড় পদাধিকারীদের গা-ছাড়া ভাব চিন্তায় ফেলেছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বকে।
জানা গেছে, রাজ্যে বিজেপির সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে মাত্র দু’জনেরই বরাতে শিকে ছিঁড়েছে। বাকিরা নানা দরজায় কড়া নেড়েও সুবিধা করতে পারেননি। সহ-সভাপতিরাও অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু প্রার্থী তালিকা দেখে তাঁদের বেশিরভাগেরই মুখ কালো হয়ে গিয়েছে। জানা গেছে, এঁদের মধ্যে অনেকেই যে যার মতো করে টিকিট আদায়ের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। দিল্লীও ছুটেছিলেন কেউ কেউ। যেমন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরীর ইচ্ছে ছিল বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে লড়ার। কিন্তু ওই কেন্দ্রে দাবিদার এত বেশি যে বিশ্বপ্রিয় দলকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, মালদা উত্তর থেকে লড়তেও তাঁর কোনও আপত্তি নেই। দিল্লির এক শীর্ষ নেতার কাছেও নাকি টিকিটের তদ্বির করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি।
দলের রাজ্য সহ-সভাপতি রাজকমল পাঠক আবার হুগলী কেন্দ্রে টিকিটের প্রবল দাবিদার ছিলেন। তবে শেষমেশ প্রার্থী হতে না পেরে দলত্যাগ করেন তিনি। অন্যদিকে, মাস তিনেক আগেই দিল্লী থেকে পাকাপাকি কলকাতায় চলে এসেছেন দলের যুব মোর্চার কেন্দ্রীয় সম্পাদক সৌরভ শিকদার। তিনি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তপন শিকদারের ভাইপো। তাঁর বড় সাধ ছিল এ বছর দমদম লোকসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে লড়ার। এক সময় তাঁর কাকা এই কেন্দ্র থেকে জিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে কাকার হারের বদলা এ বছর নিতে চেয়েছিলেন সৌরভ। নিজের মতো করে দমদমে সাংগঠনিক কাজও শুরু করে দিয়েছিলেন। প্রার্থী তালিকায় ঠাঁই হয়নি তাঁরও। দমদমে শমীক ভট্টাচার্যকে জেতানোর জন্য তিনি আদৌ মাঠে নামবেন কি না, তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ আছে বিজেপির অন্দরে।
দিলীপ ঘোষ দলের সভাপতির চেয়ারে বসার পর পার্টিতে দ্রুত উত্থান হয়েছিল রাজু বন্দ্যোপাধ্যয়ের। সাধারণ সম্পাদক পদও দেওয়া হয়। বাঁকুড়া কেন্দ্র থেকে লড়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। রাজু টিকিট পাচ্ছেন তা একরকম নিশ্চিত ছিল। তবে বাঁকুড়ায় অন্যতম দাবিদার ছিলেন সুভাষ সরকারও। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান জগৎপ্রসাদ নাড্ডার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক সুভাষের। সেই সুবাদেই শিকে ছিঁড়েছে।’ উল্টোদিকে, কোনও কেন্দ্র থেকেই টিকিট পাননি রাজু। যার ফলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে তাঁর মনে। শুধু তাই নয়, এই ছবি দেখা যাচ্ছে গোটা রাজ্যজুড়েই। আর এই পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে এখন নাভিশ্বাস উঠছে বিজেপি নেতৃত্বের।