মৃতদেহগুলোর উপর স্তরে স্তরে জমেছিল পুরু বরফ। বিশ্ব উষ্ণায়ণের সৌজন্যে বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়ার বরফ গলতে শুরু করেছে আর তার জেরেই অসংখ্য নিখোঁজ অভিযাত্রীদের দেহ বেরিয়ে আসছে। মেরুপ্রদেশ থেকে শুরু করে হিমালয়, দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে উষ্ণতা। সে কারণে বরফ সর্বত্রই গলতে শুরু করেছে কয়েক বছর ধরেই। এর নানা কুফল প্রায়ই সামনে আসে। কিন্তু এ নিয়ে বিশ্ব জুড়ে যতটা প্রচার ও সচেতনতা গৃহীত হওয়া উচিত, তার প্রায় কিছুই হয় না। নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি আং শেরিং শেরপা বলেন, “২০০৮ সালে এক বার এমন হয়েছিল। ১৯৭০ সালে চাপা পড়া সাত জন ব্রিটিশ অভিযাত্রীর দেহ একসঙ্গে বেরিয়ে এসেছিল। সেগুলো নামানো হয়। কিন্তু তার পর থেকে আর কখনও এত দেহ দেখা যায়নি। এই বছর অস্বাভাবিক রকম গলেছে বরফ। তার জেরেই এত মানুষের দেহ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে”।
গত কয়েক বছর ধরে সারা পৃথিবীর সঙ্গে বাড়ছে হিমালয়ের তাপমাত্রাও। গলছে এভারেস্টের বিভিন্ন হিমবাহ। তার ফলে বরফে চাপা পড়ে থাকা পর্বতারোহীদের মৃতদেহ বেরিয়ে আসছে অনেক বেশি সংখ্যায়। নেপাল ন্যাশনাল মাউন্টেন গাইড অ্যাসোসিয়শনের তরফে সবিত কুঁয়ার জানিয়েছেন, ‘‘বিষয়টি খুবই চিন্তার। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে আমাদের। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আমরা মৃতদেহ নামিয়ে আনছি। কখনও আবার শুধুই প্রার্থনা করে পাথর আর বরফ দিয়ে মৃতদেহগুলি চাপা দিয়ে দিচ্ছি”। এ বিষয়ে আং শেরিং বলছেন, ‘‘কিছু দিন আগেই একটি মৃতদেহ বেরিয়ে এসেছিল পর্বতশৃঙ্গের প্রায় কাছে। মৃতদেহটি ঠান্ডায় তো জমাট বেঁধে গিয়েছিলই সেই সঙ্গে তার ওজন হয়ে গিয়েছিল প্রায় ১৫০ কেজি। ওই দুর্গম জায়গা থেকে মৃতদেহটি নীচে নামিয়ে আনতে বেশ কষ্টই হয়েছিল আমাদের। সব সময় তা সম্ভব হয় না।’’
১৯৫৩ সালে প্রথম এডমন্ড হিলারি এবং শেরপা তেনজিং নোরগে এভারেস্টের চুড়ো স্পর্শ করেন। তথ্য বলছে, তার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার পর্বতারোহী নিরাপদে এভারেস্ট সামিট করে ফিরে এসেছেন, অনেকেই ফেরেননি। কিন্তু এক গবেষণায় দেখা যায় হিমালয়ের বরফ প্রবল গতিতে গলতে শুরু করেছে। আগামী ১০০ বছরের মাথায় ৭০-৯৯ শতাংশ হিমবাহ গলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা তো পরে, অতীতের প্রায় একশো বছর ধরে হিমালয়ের তুষাররাজ্যে সমাহিত পর্বতারোহীদের মৃতদেহ উন্মুক্ত হওয়ায় নেপালের পর্বতারোহী সংস্থাগুলো সমস্যায় পড়েছেন।