প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে থেকেই গেরুয়া শিবিরে শুরু হয়ে গিয়েছিল গোষ্ঠীকোন্দল। দীর্ঘ টালবাহানার পর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা হতেই সেই কোন্দল এখন তুঙ্গে। কোচবিহার, উত্তর মালদা, জলপাইগুড়ি, মথুরাপুর, হুগলী, সব জায়গায় একই চিত্র। প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবিতে খোদ দলীয় কর্মীদের তরফ থেকেই দিকে দিকে পড়ছে পোস্টার। নিশীথ প্রামাণিক, খগেন মুর্মু, সায়ন্তন বসু, লকেট চট্টোপাধ্যায়—বিজেপির একের পর এক ঘোষিত প্রার্থীকে নিয়ে বাংলায় যেভাবে দলের মধ্যেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, তাতে ব্যাপক উদ্বিগ্ন গেরুয়া শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা। এই অবস্থায় অমিত শাহের বেঁধে দেওয়া টার্গেট আদৌ পূরণ করা সম্ভব কি না, তা নিয়েই কপালে ভাঁজ পড়েছে তাঁদের।
যদিও এই অবস্থাতে বঙ্গ বিজেপির নেতাদের দাবি, প্রার্থী নিয়ে বিক্ষোভ দেখা দিলেও তা সামাল দিয়ে লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় অন্তত ৩২টি আসন জিতবে বিজেপি। এই মর্মেই দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন তাঁরা। তবে বিদায়ী সংসদ সদস্য থাকা সত্ত্বেও যে বিজেপি এক দার্জিলিং আসনেই প্রার্থী বাছতে হিমশিম খাচ্ছে, তারা অমিত শাহের ঠিক করে দেওয়া ২৩টি আসনের থেকেও রাজ্যের আরও নটি বেশি লোকসভা কেন্দ্রে জয় ছিনিয়ে নেবে, এই দাবি কতটা বাস্তবসম্মত সেই প্রশ্নই তুলছে রাজনৈতিক মহল।
বিজেপির অন্দরের খবর, জেলায় জেলায় বিজেপির প্রার্থী নিয়ে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তাতে বঙ্গ নেতৃত্বের উপর চরম ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতারা। দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্য পার্টির কাছে তাঁরা জানতে চেয়েছেন, এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে, তা আগে থেকে আঁচ করা যায়নি কেন? আর যদি আঁচ করাই যায়, তাহলে তা নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হল না কেন? এরই জবাবে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লক্ষ্যমাত্রার থেকেও বেশি আসনে জয়লাভের সম্ভাবনার রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন বলে খবর।
এ ব্যাপারে বিজেপির অন্যতম কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা দলের প্রাক্তন পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি রাহুল সিনহা বলেছেন, ‘দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ বাংলা থেকে ২৩টি আসন চেয়েছেন। আমরা তাঁকে বলছি, ২৩টি নয়, লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ৩২টি আসন জিতবে বিজেপি। দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় সামান্য বিক্ষোভ হয়েছে। তা সামলানোও গিয়েছে। আসলে বিজেপিকে বিপাকে ফেলতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলি এহেন ঘটনাকে বড় করে প্রচার করছে।’
দীর্ঘদিন ধরেই লোকসভা নির্বাচনে বাংলাকে পাখির চোখ করেছেন মোদী-শাহ জুটি। সেইমতোই বাংলায় ২৩টি আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছেন অমিত শাহ। এখনও পর্যন্ত বিজেপি বাংলায় ২৯ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তা প্রকাশের পরেই রাজ্যের একাধিক কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থীকে ঘিরেই বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপিরই একাংশ। তৃণমূল থেকে সদ্য বিজেপিতে যোগ দিয়েই লোকসভা নির্বাচনের টিকিট পেয়ে যাওয়ায় তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয় কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিককে কেন্দ্র করে। এমনকি কোচবিহারের বিজেপি কার্যালয়ে ভাঙচুরও চালানো হয়।
মালদা উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া খগেন মুর্মুকে কেন্দ্র করেও একইরকম বিক্ষোভ চলে ওই জেলায়। বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী সায়ন্তন বসুর বিরুদ্ধেও বিজেপির পোস্টার পড়ে। প্রার্থী তালিকা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি রাজকমল পাঠক পদত্যাগ পর্যন্ত করেছেন। সব কেন্দ্রে এখনও প্রার্থী ঘোষণা করতে না পেরে এমনিতেই বাংলায় অনেকটা পিছিয়ে থেকে শুরু করছে বিজেপি। অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই প্রচারের ঢাকে কাঠি দিয়ে ময়দানে নেমে পড়েছে রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু দিকে-দিকে প্রার্থী ও গোষ্ঠীকোন্দল নিয়ে এখনও চরম বিপাকে বিজেপি। সবমিলিয়ে গোটা রাজ্যজুড়েই এই মুহূর্তে অন্তর্কলহে জেরবার গেরুয়া শিবির। যা সামাল দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে বিজেপি নেতৃত্বের।