ভোট ঘোষণা হয়ে গেছে। তার পর পরই রাজ্যে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেইসঙ্গে রাজ্যে ৪২-এ ৪২ আসন জেতার টার্গেটও ঠিক করে দিয়েছেন তিনি। কারণ এবারের লড়াইটা দিল্লী দখলের। রাজ্যের ভূখন্ড ছাড়িয়ে গোটা দেশে নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলাই এখন মূল লক্ষ্য বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। তাই রবিবার দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের কর্মীসভা থেকে তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের বার্তা, ৪২টি লোকসভা আসনে ঘাসফুল প্রতীকের মতো প্রার্থীও এক এবং অভিন্ন মমতাই। সেইসঙ্গে দলের নির্দেশ, মাত্রা ছাড়ানো আত্মবিশ্বাস ত্যাগ করে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমুখী কর্মকান্ডকে প্রচারের অস্ত্র করেই কাজে নেমে পড়তে হবে কর্মীদের।
দিল্লীতে বিকল্প সরকার গড়ার লক্ষ্যে গোটা দেশের বিরোধীদের এককাট্টা করে লোকসভা নির্বাচনের ময়দানে নেমেছেন বাংলার বাঘিনী। এই অবস্থায় রাজ্যের সবক’টি আসন দখল করে দিল্লীর সংসদে পৌঁছনোই তৃণমূলের প্রধান লক্ষ্য। স্বভাবতই সেই লক্ষ্যপূরণে রাজ্যবাসী তো বটেই, দেশবাসীর কাছেও একমাত্র মুখ মমতা। গতকাল দলের কর্মীসভায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি বলেন, মনে রাখবেন, আমরা কেউ কারও লোক নই। সবাই আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জোড়াফুল প্রতীকের প্রতিনিধি। আমরা তাঁরই সৈনিক। তাই সব জায়গায় মনে রাখবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমাদের প্রার্থী। এ কথা স্মরণে রেখেই ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
পাশাপাশি, রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমও মনে করেন যে, রাজ্যের ৪২টি আসনে একজনই প্রার্থী, তিনি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই ৪২ আসনেই জিততে হবে। সেই দায়িত্বের কথা ভুললে চলবে না। নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে কারও মনে দ্বিধা থাকতে পারে। কিন্তু নেত্রী হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের কাছে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, নেত্রীর প্রতি সংগঠনের কর্মীদের সেই নিরঙ্কুশ আস্থাই তৃণমূলের শক্তি। দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, কর্মীরাই তৃণমূলের সম্পদ। তাঁরাই দলকে জেতাবেন, এই বিশ্বাস আছে।
তবে বিশ্বাসের পাশাপাশি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া চলবে না বলে কর্মীদের সতর্ক করে দিয়েছেন পার্থ। রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিও বলেন, দক্ষিণ কলকাতায় শেষ দফায় ভোট বলে গা-ছাড়া ভাব দেখানো চলবে না। উল্লেখ্য, এই দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে দীর্ঘদিন ভোটে জিতে সংসদে গিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসার পর এই কেন্দ্রের অন্তর্গত ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন তিনি। এমনকি ২০০৪ সালেও এই কেন্দ্রের মানুষ তৃণমূল নেত্রীকে বিপুল ভোটে জিতিয়ে দিল্লীতে পাঠিয়েছিল। তাই দল তো বটেই, গোটা রাজ্যের মানুষের কাছেই মুখ্যমন্ত্রীর আবাসস্থল এই দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের সঙ্গে একটা আলাদা ভাবাবেগ জড়িয়ে রয়েছে।
গতকাল কর্মীদের উদ্দেশ্যে পার্থ বলেন, মনে রাখবেন, এবার শুধু একটা লোকসভা কে দখল করবে তার নির্বাচন নয়, দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্ব বজায় থাকবে কি না, সেটাও নির্ধারিত হবে আসন্ন নির্বাচনে। দলের প্রচারের অভিমুখ কী হবে, সেটাও এদিন বাতলে দেন তৃণমূলের মহাসচিব। তিনি বলেন, রাজ্যজুড়ে সমাজের সব অংশের মানুষের জন্য তৃণমূল সরকারের যে বিপুল কর্মযজ্ঞ, তা নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে। সরকারি পুস্তিকা পড়ার ব্যাপারে কর্মীদের আরও তৎপর হতে বলেন তিনি।
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, এবার ওয়ার্ডের কাউন্সিলারদের মধ্যে কে কত ভোটে দলের প্রার্থীকে এগিয়ে দিতে পারে, তার প্রতিযোগিতা হোক। কেননা এর পরেই তো পুর নির্বাচন রয়েছে। মানুষের কাছে গিয়ে বলুন, সারা বছর আপনাদের পরিষেবা দিই। আপনার একটা দিন তার প্রতিদান দিন। কেন্দ্রের পাঠানো বাহিনী নিয়ে বিশেষ ভাবার কোনও কারণ নেই। এই বিষয়ে পার্থের কটাক্ষ, যে অবস্থা হয়েছে তাতে মনে হয়, বিজেপি বাহুবলী হতে চাইছে। কাশ্মীরেও এত কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে কি না সন্দেহ। অন্যদিকে, দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায় বলেন, দল যে দায়িত্ব দিচ্ছে সেটা যেন সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারি, সেদিকে নজর দিতে হবে। অতি-আত্মবিশ্বাসী হয়ে বসে থাকলে চলবে না।