মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবারই এই কথা বলে থাকেন যে ‘এগিয়ে বাংলা’। সে কৃষিক্ষেত্রেই হোক বা গ্রামোন্নয়নে। গঙ্গা সাফাই থেকে শুরু করে ১০০ দিনের কাজ, সবেতেই প্রথম মমতার রাজ্যই। আর এবারের লোকসভা ভোটে প্রথম বারের ভোটারের সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি এই রাজ্যেই। এ রাজ্যের মোট ২০ লাখ ১০ হাজার ভোটার এবার প্রথম বারের জন্য ভোট দিতে চলেছেন। বাংলার পর রয়েছে উত্তরপ্রদেশ (১৬ লাখ ৭০ হাজার) ও মধ্যপ্রদেশ (১৩ লাখ ৬০ হাজার)।
জানা গেছে, ২০১৯-এ সারা দেশে প্রথম বারের ভোটার বেড়েছে দেড় কোটি। এঁদের বয়স ১৮-১৯ বছর। আর ২০১৪ সালের তুলনায় ভোটারের সংখ্যা সারা দেশে বেড়েছে ৮ কোটি ৪০ লক্ষ। প্রথম বারের ভোটার বেড়েছে রাজস্থানে ১২ লক্ষ ৮০ হাজার, মহারাষ্ট্রে ১১ লক্ষ ৯০ হাজার, তামিলনাড়ুতে ৮ লক্ষ ৯০ হাজার এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ৫ লক্ষ ৩০ হাজার।
গোটা দেশেই নতুন ভোটার হওয়া মেয়েদের মনে মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টিই সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। এমনকি তাঁরা যে সমস্ত পেশা বেছে নিতে চান, তাও আলাদা। কিন্তু পড়াশোনা করার জন্য যাঁরা অন্য শহরে রয়েছেন, তাঁরা সোশ্যাল সাইটে খুব বেশি মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বছর কুড়ির কণিকার সঙ্গে প্রায় একই বয়সি মধুমিতার কোনও ফারাক নেই। কণিকা হরিয়ানার মেয়ে হলেও পড়াশোনা করছেন দিল্লীর মিরান্ডা হাউস কলেজে।
আর অন্যদিকে, মধুমিতা পড়ছেন বেঙ্গালুরুর দয়ানন্দ সাগর কলেজ অফ আর্কিটেকচারে। তিনি আদতে তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুরের মেয়ে। তাঁদের ভয় সোশ্যাল সাইটে নিজের মতামত জানালে তার প্রতিক্রিয়া হতে পারে এবং তাতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। বিশেষ করে এই সময়ে যখন উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব তুঙ্গে।
প্রথম বারের ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা সত্যিকারের ইস্যুগুলো নিয়ে বেশি ভাবিত। এঁদের একজন উৎকর্ষ চৌবের বক্তব্য, ৩,০০০ কোটি টাকা খরচ করে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি তৈরির কোনও প্রয়োজন ছিল না। তার বদলে যুবাদের এবং দেশের মানুষের উপকার হবে এমন কিছু করা দরকার ছিল। পাটনার উৎকর্ষ পড়াশোনা করছেন বেঙ্গালুরুতে। তাঁর বক্তব্য, তিনি এবং তাঁর বন্ধুরা অনেকেই বিভ্রান্ত। তাঁরা মনে করেন কোনও রাজনৈতিক দলই তাঁদের অনুপ্রাণিত করতে পারছে না।
অন্যদিকে, এক কাশ্মীরি ছাত্র বলছেন, কাশ্মীরের কমবয়সিরা যুদ্ধ নয়, শান্তি চান। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিই তাঁদের কাম্য। কারণ ভাল চাকরি পেতে হলে শিক্ষা যেমন দরকার, তেমনই দরকার শরীর ও স্বাস্থ্য ভাল হওয়া। আসলে নতুন ভোটারদের মধ্যে একটা বৃহৎ অংশই নিরাপত্তার অভাবে ভুগছে। পুলওয়ামার জঙ্গী হামলা ও তার পরবর্তী সময়ে দেশজুড়ে ওঠা যুদ্ধের জিগির ও সেইসঙ্গে উগ্র জাতীয়তাবাদী মনোভাব দেখে সকলের মুখেই এক কথা, তাঁরা যুদ্ধ চায় না। তবে কেউ যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে যেভাবে দেশদ্রোহী তকমা দেওয়া হচ্ছে তা দেখে বিচলিত এরা প্রত্যেকেই।