দোরগোড়ায় লোকসভা ভোট। আর তার আগে একাধিক ইস্যুতে টালমাটাল গেরুয়া শিবির। সাধারণত দেশের একাধিক সরকারি সংস্থা সরকারের নানা বিষয়ে রিপোর্ট তৈরি করে। সেগুলি সাধারণ মানুষ দেখতে পান। পরিসংখ্যান ও তথ্য সরবরাহের বিষয়ে সেই সংস্থার তথ্যাদি সর্বজনগ্রাহ্য হিসাবেই ধরা হয়। কিন্তু সেখানেও নাকি কারচুপি করছে কেন্দ্রীয় সরকার। ঠিক যেমন করে নেতিবাচক রাষ্ট্রের প্রধানরা ইতিহাস পাল্টে দিতেন, তথ্য দিতেন কেবলমাত্র সরকারের পক্ষে।
প্রসঙ্গত, জর্জ অরওয়েলের ১৯৮৪ বা অ্যালডাস হাস্কির ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ডের কথা মনে পড়ে। আমাদের কাছে যেমন করে ইউটোপিয়ান বা স্বপ্নের রাষ্ট্রের ছবিটা পরিষ্কার, কিন্তু ডেসটোপিয়া? উল্টো মেরুর রাষ্ট্রের কথাই লিখেছিলেন অরওয়েল ও হাস্কি। ততটা না হলেও, যেন সেই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের চিহ্নই প্রকাশ করছে কেন্দ্রের মোদী সরকার। সম্প্রতি বিভিন্ন সরকারি রিপোর্টেই মোদী সরকারের ব্যর্থতার নানা চিত্র উঠে আসছে। সবটাই সরকার বিরোধী। তাই এখন রিপোর্ট চেপে দিতে চাইছে কেন্দ্র।
সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস, ন্যাশনাল স্যাম্পেল সার্ভে অফিসের মতো সংস্থার বিশ্বে সুনাম রয়েছে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই সব প্রতিষ্ঠানের কাজে হস্তক্ষেপ করেছে। যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে তৈরি করেছে নীতি আয়োগ। শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর নির্দেশ পালন করে চলেছে সেই আয়োগ।
ভোটের মুখে এই বিষয়টি সামনে আসতেই তোলপাড় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহল। সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকেই মনে করছেন, সরকারের এই জাতীয় সিদ্ধান্তগুলি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে প্রভাবিত করছে। এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে। আর তাতে স্বাক্ষর করেছেন নানা মহলের ১০৮ জন গবেষক, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী।
যাঁরা সই করেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অমিয় বাগচী, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রণব বর্ধন, অমিত ভাদুরি, জেমস বয়েস, সিপি চন্দ্রশেখর, জাঁ দ্রেজে, এসথার ডাফলো, মৈত্রীশ ঘটক, জয়তী ঘোষ, আর রামকুমার, দেবরাজ রায়, অভিজিৎ সেন, মধুরা স্বামীনাথন প্রমুখ। বিশেষজ্ঞরা গভীর উদ্বেগ জানিয়ে বলেছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানগুলি আজ বিপন্ন।
এই অভিযোগ যে মিথ্যা নয়, তারও পরিসংখ্যান রয়েছে। জিডিপির হার নিয়ে মোদী সরকার যে নতুন পদ্ধতি চালু করেছে, তার সমালোচনা করেছেন তাঁরা। তাঁদের মতে উৎপাদনের হার বেশি দেখাতে জিডিপির পরিসংখ্যানে কারচুপি করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সকলের আবেদন, আর সময় নষ্ট করা যাবে না। এখন থেকেই সরকারের এই বিপজ্জনক নীতির বিরুদ্ধে স্বর তুলতে হবে।