ক্ষমতায় এসেই বাংলার ঘরে ঘরে উন্নয়নের আলো পৌঁছে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর উদ্যোগে গোটা রাজ্য জুড়েই চলছে বিশাল উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। যাতে মুগ্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়েই অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। সেই পথ ধরেই চলতি বছরের শুরুতে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন মালদা উত্তর কেন্দ্রের সাংসদ মৌসম বেনজির নুর। তাঁর মূল উদ্দেশ্যই ছিল মমতার উন্নয়নের যজ্ঞে সামিল হওয়া। আর ঠিক সেই কারণেই একেবারে লোকসভা ভোটযুদ্ধের আগে মমতার হাত শক্ত করতে জোড়াফুল শিবিরে যোগ দেন তিনি।
২৮ জানুয়ারি তৃণমূলে যোগ দিয়েই মৌসম জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘এই মুহূর্তে ভারতবর্ষের একমাত্র মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উনিই আমাদের নেত্রী। বিজেপিকে হারাতে তাঁর নেতৃত্বেই লড়ব। ওদের এক ইঞ্চি জমিও ছাড়ব না। বিজেপি হারাতে যা যা করতে হয় করব।’ তাই তাঁর প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখেই এবারের লোকসভায় তাঁকে মালদা উত্তর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী করেছেন দলনেত্রী মমতা। আর এবার তৃণমূলের হয়ে প্রচারে নামার আগেই কংগ্রেসের সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বরাবরই সৎ রাজনীতিক বলে পরিচিত মৌসম। এদিন নিজে শারীরিকভাবে উপস্থিত হয়ে স্পিকারের কাছে তাঁর ইস্তফা পত্র দিয়ে আসেন প্র্যাত কংগ্রেস নেতা গনি খান চৌধুরীর ভাগ্নী।
তবে মৌসম তাঁর নতুন দলের প্রতি সততা দেখালেও, ঠিক তাঁর উল্টো পথেই হেঁটেছেন সম্প্রতি তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ এবং বোলপুরের সাংসদ অনুপম হাজরা। উভয়কেই দল থেকে বহিষ্কৃত করা হয়েছিল তাঁদের দলবিরোধী কাজকর্মের জন্য। শুধু তাই নয়, এই দুজনকেই ‘গদ্দার’ বা ‘দলের আগাছা’ বলেও মন্তব্য করেন স্বয়ং দলনেত্রী থেকে শুরু করে দলের যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। কিন্তু তারপর লজ্জার খাতিরেও দলের সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করেননি সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া ওই দুই নেতা।
উল্লেখ্য, ৯ জানুয়ারি দুপুরে মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়ে দিয়েছিলেন সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। আর দু’দিন আগে ১২ মার্চ সেই মুকুলের হাত ধরেই বিজেপিতে যোগ দেন অনুপম হাজরা। তবে বিজেপিতে যোগ দিলেও এখনও নিজেদের সাংসদ পদ ছাড়ার নাম নেই সৌমিত্র-অনুপমের। দুজনেই এখন গেরুয়া শিবিরের নেতা হলেও, গায়ে কিন্তু দিব্যি ‘তৃণমূল সাংসদ’ তকমা লাগিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, কেন? বিজেপিতে যোগ দিলেও সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ না করার কারণ কী? কারণ হল, টিকিট! আসলে বিজেপির হয়ে তাঁরা আদৌ টিকিট পাবেন কিনা, তা নিয়ে এখনও সন্দিহান সৌমিত্র ও অনুপম।
দুজনেই মুকুলের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। দুজনকেই তাঁদের ‘আচ্ছে দিন’ আসার স্বপ্ন দেখিয়েছেন মুকুল। কিন্তু তাও মুকুলকে ঠিক ভরসা করতে পারছেন না এই দুই নেতা। কারণ এমনিতেই রাজ্যের গেরুয়া শিবিরে গোষ্ঠী কোন্দল লেগেই আছে। ইতিমধ্যেই রাণাঘাটের মতো একাধিক কেন্দ্রে প্রার্থী বাছাই নিয়ে তুলকালাম কান্ড বেঁধে গেছে। বিভিন্ন গোষ্ঠী বিভিন্ন জনকে প্রার্থী হিসেবে চাইছে। বিজেপির অন্দরের এই চূড়ান্ত অব্যবস্থা দেখেই ‘সমঝে চলো’ নীতি নিয়েছেন সৌমিত্র-অনুপম। তাই যতদিন না লোকসভার টিকিট কনফার্ম হচ্ছে, ততদিন ‘ওয়েটিং লিস্ট’-এ থাকা সৌমিত্র-অনুপম নিজেদের সিট থেকে নড়বেন না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ।