পাহাড়বাসীরা বারবারই বলে থাকেন, পাহাড়ের মন বোঝেন মমতা। তাঁর আমলেই ফের হাসছে গোটা পাহাড়। এ কথা যে একেবারেই ভুল নয়, আবারও তা প্রমাণ করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। হঠাৎ করেই ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ কেউ নন। নন অন্য রাজ্য থেকে আসা কোনও পরিযায়ী নেতাও। বরং পাহাড়ের মানুষের দাবিকে সম্মান জানিয়ে এবার এক ভূমিপুত্রকেই প্রার্থী করেছেন মমতা। ফলে মঙ্গলবার প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে পাহাড়।
শুধু ভূমিপুত্রই নয়। দার্জিলিং লোকসভা আসনে তৃণমূল এবার এমন একজনকে প্রার্থী করল, যিনি শুধু একজন শিক্ষিত প্রাজ্ঞই নন, সরল, নম্র স্বভাবের। খুবই বিচক্ষণ। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাও যথেষ্ট। নিজেকে উন্নত করে তুলতে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন। তারপরও দার্জিলিং শহরকে ভোলেননি। শৈলশহরের জন্য নিজেকে নিবেদিত রেখেছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, অমর সিং রাইকে প্রার্থী করে বিরোধীদের একেবারেই কোণঠাসা করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, অমর সিং রাইয়ের জন্ম দার্জিলিং শহরেই। বাবা আর এস রাই ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল। মা ভদ্রশীলা রাই। স্ত্রী কুমকুম রাই (নিদাস) জন্মসূত্রে বাঙালি পরিবারের। তাই রাই খুব ভাল বাংলাও বলতে পারেন। ১৯৭১ সাল থেকে তিনি লরেটো কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। ২০০৮ সালে অবসর নেওয়ার আগে পর্যন্ত ছিলেন ভাইস প্রিন্সিপাল।
পাশাপাশি তিনি সেন্ট জোসেফ কলেজ ও ঘুম জোড়বাংলো কলেজের অতিথি-অধ্যাপক হিসেবে পড়িয়েছেন। এমনকি ঘুম জোড়বাংলো কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও রাইয়ের বড় ভূমিকা আছে। এছাড়া ১৯৯৯ সালে রোটারি ইন্টারন্যাশনালের হয়ে সামাজিক সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির বার্তা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছেন তিনি। বইও লিখেছেন। সব মিলিয়ে পাহাড়ে বেশ সম্মাননীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবেই পরিচিত রাই।
প্রসঙ্গত, অধ্যাপনার জীবন থেকে অবসর নিয়ে ২০১১ সালে রাজনীতিতে নামেন তিনি। পুরভোটে নির্বাচিত হয়ে দার্জিলিং পুরসভার চেয়ারম্যানও হন। এরপর ২০১৬ সালে দার্জিলিঙের বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে দার্জিলিংবাসীর মন জিতে নিয়েছেন তিনি। এই মুহূর্তে পাহাড়ে যেখানে বিভিন্ন শক্তি বিভেদে উসকানি দিচ্ছে, সেখানে দাঁড়িয়ে রাইকে প্রার্থী করে এবার সম্প্রীতির নজির তৈরি করেছে তৃণমূল।
বিনয়পন্থী মোর্চার মুখপাত্র সুরজ শর্মা জানান, ‘ভূমিপুত্রকে প্রার্থী করার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’ মোর্চার সহ-সভাপতি সতীশ পোখরেল জানান, ‘তৃণমূল নেত্রী পাহাড়ের উন্নয়নকে আরও ত্বরান্বিত করার পথ করে দিলেন।’ জানা গেছে, পাহাড়ের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও মোর্চা নেতা তৃণমূলের প্রতীকে লড়াই করছেন। তাই গতকাল প্রার্থী ঘোষণা হতে তৃণমূল তো বটেই, মোর্চা-সহ পাহাড়ের সাধারণ মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পথে নেমে লাড্ডু বিতরণ করেন।