৮ নভেম্বর রাতে নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার এক সপ্তাহ পর ১৬ নভেম্বর নোট বাতিল নিয়ে নিজের মতামত সরকারকে জানিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। মোদী সরকারের নোটবন্দীর সিদ্ধান্তে যে সম্মতি ছিল না রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। কারণ নোটবন্দী কালো টাকাকে খতম করবে – মোদী সরকারের এমন যুক্তি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তৎকালীন পরিচালন বোর্ড সদস্যদের সকলকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। বরং তাঁদের বক্তব্য ছিল, কালো টাকার খুব কম অংশ নগদে থাকে।
জানা গেছে, নোটবন্দীর পদক্ষেপের পর ২০১৬-‘১৭ সালে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ধাক্কা খাবে বলেও সরকারকে সতর্ক করেছিলেন বোর্ডের সদস্যরা। কিন্তু এতকিছুর পরও বোর্ড ওই পদক্ষেপকে ‘প্রশংসনীয়’ বলে মন্তব্য করে নোটবন্দীর প্রক্রিয়ায় ছাড়পত্র দিয়েছিল ‘বৃহত্তর জনস্বার্থে’। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় নোটবন্দী ঘােষণার মাত্র আড়াই ঘণ্টা আগে বৈঠকে বসেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ড। তবে বোর্ডের লিখিত অনুমোদন এসে পৌঁছনোর আগেই ৮ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শেষ পর্যন্ত ১৬ ডিসেম্বর সরকারের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের লিখিত অনুমোদন পত্র আসে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর নোটবন্দীর কথা ঘোষণার ঘন্টা তিনেক আগে ব্যাঙ্কের বোর্ড প্রস্তাবটি চূড়ান্তভাবে পর্যালোচনা করতে বৈঠকে বসেছিল। তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতায় ওই বিষয়ে একটি প্রশ্নের উত্তরে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ওই বৈঠকে আলোচনার সমস্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সরকারের অন্য দু’টি যুক্তি নিয়ে ব্যাঙ্ক ডিরেক্টরের একাংশের বেশ কিছু আপত্তি ছিল। যেমন নোটবন্দীর ফলে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার জাল নোট ধরা পড়ার যুক্তিটি খুব জোরদার বলে মনে হয়নি ব্যাঙ্কের সব ডিরেক্টরের। দেশে মোট জাল নোটের পরিমাণ ছিল ৪০০ কোটি টাকা। কিন্তু ওই ডিরেক্টরদের মতে, ওই পরিমাণ জাল নোট নগদ টাকার মোট পরিমাণের একটা নগণ্য অংশমাত্র।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে বলা হয়েছিল, ২০১১-‘১২ থেকে ২০১৫-‘১৬ সালের মধ্যে অর্থনীতির বৃদ্ধি হয়েছে ৩০ শতাংশ। কিন্তু ৫০০ টাকার বৃদ্ধি হয়েছে ৭৬ শতাংশ এবং ১০০০ টাকার বৃদ্ধি হয়েছে ১০৯ শতাংশ। এ সম্পর্কে ব্যাঙ্কের কর্তাদের কেউ কেউ বলেছিলেন, দু’টি সূচকের তুলনার ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতির হারের কথা বিবেচনা করলে দেখা যাবে, নেট বৃদ্ধির হার ততটা বেশি নয়। কালো টাকার প্রসঙ্গে কর্তাদের কারও কারও বক্তব্য ছিল, কালো টাকার বেশিটাই থাকে সোনা, বাড়ি ইত্যাদিতে। তাই নোটবন্দীর ‘সুপ্রভাব’ খুব বেশি পড়বে না। তবে কোন কোন বিষয়ে কতজন আপত্তি তুলেছিল এবং কতজন সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে ছিলেন, সেই সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। ফলে সামগ্রিক ছবি স্পষ্ট হয়নি।