২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ১২.৬ কোটি মার্কিন গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার ছিনিমিনি খেলার কথা সামনে আসার পরেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষের গ্রাহকতথ্য ‘গোপন এবং সুরক্ষিত’ রাখার দাবি যে নেহাতই ‘কথার কথা’ তা জনসমক্ষে এসে গিয়েছিল। গ্রাহকদের তথ্য যে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল তা স্বীকার করে নিয়েছিলেন স্বয়ং ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা-কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গও। তাই ভারতে লোকসভা নির্বাচনের আগে কঠোর অবস্থান নিয়ে এবার দিল্লীতে একটি ‘ওয়ার রুম’ চালু করছে ফেসবুক।
জানা গেছে, ওই ওয়ার রুম থেকেই ২৪ ঘণ্টা গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার, ফেক নিউজ, ভুয়ো, মিথ্যে বা আপত্তিকর পোস্ট-সহ যাবতীয় বিষয় নিয়ন্ত্রণ করবে মার্ক জুকারবার্গের সংস্থা। গতকাল, সোমবার এমনই ঘোষণা করলেন ফেসবুকের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার পাবলিক পলিসি ডিরেক্টর শিবনাথ ঠাকরাল। উল্লেখ্য, আমেরিকার পর ভারতই হবে দ্বিতীয় দেশ, যেখানে নির্বাচনের আগে আলাদা করে এই রকম ‘কন্ট্রোল রুম’ খুলছে ফেসবুক।
জনসভা, মিটিং, মিছিল তো রয়েছেই, তার সঙ্গে ভোটের সময় জনসংযোগে প্রার্থীদের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু অনেকেই তার অপব্যবহার করেন। পাশাপাশি, মিথ্যে বা ভুয়ো খবর এবং আপত্তিকর বার্তা ছড়ানোর চেষ্টাও চলে। এবার ভোটের সময় সেই সব বিষয়ই আতসকাচের নীচে ফেলবে ফেসবুক। তবে কবে চালু হবে বা কবে থেকে কাজ শুরু করবে এই কন্ট্রোল রুম, সে বিষয়ে সংস্থার তরফে সবিস্তার জানানো হয়নি এখনও।
ঠাকরাল জানিয়েছেন, ফেসবুকের ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্ক ও আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন এবং সিঙ্গাপুরের অফিসের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা সমন্বয় রেখে দিল্লীর এই কন্ট্রোল রুম কাজ করবে। সেইসঙ্গে ভারতের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলবে এই ওয়ার রুম। তিনি বলেন, ‘কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কী ভাবে ভোটে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার আটকানো যায়, তার চেষ্টা করবে ফেসবুক।’
ভোটের সময় একাধিক রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থী প্রচুর প্রচারমূলক বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। ঠাকরাল জানিয়েছেন, আমেরিকা, ব্রাজিল এবং ব্রিটেনে সাফল্যের পর ভারতেও ‘অ্যাড ট্রান্সপারেন্সি টুল’ চালু করা হয়েছে। এর ফলে বিজ্ঞাপনটি কে দিয়েছেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এবং বিধিসম্মত ঘোষণা থাকে। এছাড়া সমস্ত রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন লাইব্রেরিতে জমা থাকে, যাতে প্রতিটি বিজ্ঞাপন সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য থাকে।
কীভাবে কাজ করবে এই কন্ট্রোল রুম? ঠাকরালের দাবি, ভারতীয় নির্বাচন ব্যবস্থার উপর ইতিমধ্যেই ৪০টি দল কাজ করছে বিভিন্ন রাজ্য। এবার লোকসভা ভোটের আগে একটি কেন্দ্রীয় দল তৈরি করে দিল্লীতে কন্ট্রোল রুম তৈরি করা হবে। ওই দলের সদস্যেরা বিভিন্ন নির্বাচন সংক্রান্ত পোস্ট, মিম, মন্তব্য বার বার খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেন। একটি দলের পরীক্ষার পরও আবার অন্য দল সেটি পরীক্ষা করে দেখে। এভাবে এবং এরপর স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তিতে একাধিক বার পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে চলবে এই প্রক্রিয়া। বিতর্কিত বা আপত্তিকর পোস্টের উৎস খুঁজে বের করে এবং আইন অনুযায়ী তার যৌক্তিকতা বিচার করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই সংক্রান্ত কমিশনের নিয়ম-কানুন দেখে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।