ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির বিপ্লব দেব মুখ খুললেই যেসব ‘মণিমানিক্য’ বেরয়, তাতে হাসির খোরাক হতে হয় দলকে। তাঁর বৈপ্লবিক বাণীর জেরে জেরবার হতে হয় দলের শীর্ষ নেতাদের। কিন্তু তাও মন্তব্য করতে ছাড়েন না বিপ্লব। এবার যেমন তাঁর সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে শনিবার আগরতলা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে এমন দুটি মন্তব্য করলেন তিনি, যা আসলে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সমালোচনা এবং সিপিএমের অভিযোগকে মান্যতা দেওয়া বলেই মনে করছেন অনেকে।
গত এক বছরে রাজ্য সরকারের কাজের খতিয়ান দিতে গিয়ে বিপ্লব বলেন, ‘কেন্দ্রে ও রাজ্যে একই দলের সরকার থাকলে অনেক দিক থেকে লাভবান হওয়া যায়।’ তাঁর দাবি, “দু’ধাপে নরেন্দ্র মোদী সরকার মোট দেড় হাজার কোটি টাকা দিয়েছে ত্রিপুরাকে।” কিন্তু পর্যবেক্ষকদের মতে, আগের বাম সরকার এই অভিযোগ প্রায়ই তুলত যে রাজ্যে আলাদা সরকার বলে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে রাজ্যকে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার সুযোগ পেলেই বলতেন, কেন্দ্র বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিপ্লব দেব ঘুরিয়ে সিপিএম তথা বামেদের সেই অভিযোগকেই মান্যতা দিয়ে ফেললেন।
আবার ই-রিকশা নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে বিপ্লব বলেন, ‘ওপার থেকে রিকশা চালকরা আসেন। সারাদিন রিকশা চালিয়ে আবার ওপারে ফিরে যান। এতে রাজ্যের গরিব মানুষের রোজগারে টান পড়ছে।’ ওপার বলতে বাংলাদেশের কথা বলেছেন তিনি। তাঁর ঘোষণা, এবার থেকে রিকশা চালকদের একটি করে কার্ড দেওয়া হবে। যাঁদের কাছে ওই কার্ড থাকবে তাঁরাই রিকশা চালাতে পারবেন। আর এ ব্যাপারে তিনি স্পষ্টই জানিয়েছেন, কোনও বাংলাদেশিকে এই কার্ড দেওয়া হবে না।
এরপরই অজান্তে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সমালোচনা করেন তিনি। বিপ্লব বলেন, ‘সীমান্ত পেরিয়ে রিকশা চালকরা আসেন। এতে রাজ্যের কিছু করার নেই। কারণ সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিএসএফের।’ এমনিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকে বাবার মতো শ্রদ্ধা করেন বিপ্লব। এ কথা তিনি নিজে মুখেও বলেছেন বহুবার। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার বিএসএফ-এর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে পরোক্ষে রাজনাথের দফতরেরই সমালোচনা করলেন তিনি।
জিম ট্রেনার থেকে মুখ্যমন্ত্রী। ২০১৮ সালের ৯ মার্চ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন বিজেপির বিপ্লব দেব। দেখতে দেখতে কেটে গেছে একটা বছর। আর এর মধ্যেই বেফাঁস কথা বলায় ‘খ্যাতি’ হয়েছে তাঁর। উল্লেখ্য, এর আগে তিনিই জানিয়েছিলেন, হাঁস জলে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়। আবার মহাভারতের যুগেও ইন্টারনেট ছিল বলে মন্তব্য করে ঝড় তুলেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় ব্রিটিশ বিরোধিতায় রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে নোবেল পুরস্কার বর্জন করিয়েছিলেন তিনি। তাঁরই যুগান্তকারী নিদান, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসতে গেলে হতে হবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার বা শিল্পের চেয়ে গোয়াল ভাল!