২৭ ফেব্রুয়ারি মিগ ২১ বাইসন বিমান নিয়ে পাকিস্তানের এফ ১৬ বিমানকে তাড়া করেছিলেন অভিনন্দন। পাকিস্তানের গোলায় তাঁর বিমান ভেঙে পড়ে। তিনি প্যারাসুট নিয়ে লাফিয়ে পড়েন। তাঁকে বন্দি করে পাকিস্তানের সেনা। তারপর প্রথম ২৪ ঘণ্টায় তারা উইং কম্যান্ডারের কাছে জানতে চাইছিল, ভারতের সেনা সীমান্তের কোথায় কোথায় মোতায়েন করা আছে? সেনাবাহিনী কত ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও ব্যবহার করে? সেনাদের হাতে কী ধরনের যন্ত্রপাতি আছে? এই তথ্যগুলি জানার জন্য তারা ৩৫ বছর বয়সী উইং কম্যান্ডারের ওপরে অত্যাচার করেছিল। যদিও অভিনন্দন কিচ্ছু জানাননি।
পাকিস্তানে বন্দি অবস্থায় দিন কেমন কেটেছে বায়ুসেনার উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের? তিনি ফিরে আসার পরে এসম্পর্কে জানিয়েছেন বায়ুসেনার এক উচ্চপদস্থ অফিসার। তিনি বলেন, ভারতের সেনাবাহিনী সম্পর্কে গোপন তথ্য জানার জন্য অভিনন্দনের ওপরে ভয়াবহ অত্যাচার চালিয়েছে পাকিস্তানিরা। তাঁকে ঘুমোতে দেওয়া হয়নি। মারধরও করা হয়েছে।
পাকিস্তান সেনার হাতে উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান বন্দি হতেই একের পর এক ভিডিও ও ছবি প্রকাশ্যে আসতে থাকে। প্রাথমিকভাবে সমস্ত ছবি ও ভিডিওতেই রক্তাক্ত অবস্থায় অভিনন্দনকে দেখা যায়। এরপর ভিডিও বার্তায় অভিনন্দনকে দিয়ে পাকিস্তান সেনার প্রশংসাও করিয়ে নেওয়া হয়। এদিকে, বায়ুসেনার এই বীর যোদ্ধা দেশে ফিরতেই তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। শুরু হয় ডিব্রিফিং প্রক্রিয়া। আর তাতেই জানা যায় পাকিস্তানে বন্দি অবস্থায় অভিনন্দনের সঙ্গে ঠিক কী কী করা হয়েছিল।
অভিনন্দন জানিয়েছেন, বন্দি হওয়ার পরে তাঁকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তাঁর কাছেই প্রচণ্ড জোরে চালিয়ে দেওয়া হয় মিউজিক। ভারতীয় পাইলটদের শেখানো হয়, ধরা পড়লে যত বেশি সম্ভব সময় ধরে চুপ করে থাকতে হবে। শত্রু যেন সহজে কোনও গোপন তথ্য না জানতে পারে। বন্দি যদি বেশিক্ষণ নিজেদের তথ্য গোপন রাখতে পারে ততক্ষণে তার সেনাবাহিনী সতর্ক হয়ে যাবে। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি, বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ পালটে ফেলবে। সেনা অবস্থানও বদলে যাবে। তাহলে শত্রু যদি বন্দিকে জেরা করে কিছু জানতেও পারে, লাভ হবে না।
অভিনন্দন তাঁর প্রশিক্ষণ মতোই কাজ করেছেন। তাঁর থেকে সহজে পাকিস্তানিরা কিছু জানতে পারেনি। পাকিস্তানে বন্দি থাকা অবস্থায় অভিনন্দন সব সময় মাথা উঁচু রেখেছেন। প্লেন থেকে ইজেক্ট করতে গিয়ে তিনি রীতিমতো পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও পাকিস্তানিরা তাঁকে বসতে পর্যন্ত দেয়নি। তাঁর মেডিক্যাল চেক আপ হয়নি। তাঁকে ঘন ঘন এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি বেশিরভাগ সময় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। কিন্তু তাঁকে জেরা করেছে পাকিস্তানের বায়ুসেনা। তারা কেবলই জানতে চাইছিল, এলওসি-র ওপারে ঠিক কোন কোন জায়গায় ভারতের সেনা মোতায়েন করা আছে?
যদিও পরবর্তী সময়ে ভারতের চাপে পড়ে অভিনন্দনকে সসম্মানে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। পাকিস্তানের বীভৎস চাপেও ভেঙে না পড়ে সদর্পে ভারতে ফেরেন অভিনন্দন।