তিনি ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। ৫ বছর আগে আচ্ছে দিন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিল্লীর কুর্সিতে বসেছিলেন তিনি। কিন্তু কোথায় আচ্ছে দিন? তবে কি পুরোটাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘জুমলা’ ছিল? আসলে কোন সূচকে ধরা দিল আচ্ছে দিন, সে প্রশ্নের জবাব এখনও অমিল। জবাব নেই মোদী সরকারের কাছেও।
নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, সংবাদমাধ্যমে ততই বাড়ছে রাজনৈতিক প্রচারের রমরমা। কোন দলের সরকার কেমন কাজ করেছে, কোন দলের আসন বাড়তে পারে, কোন দল আগের চেয়ে পিছিয়ে পড়তে পারে— ট্রেনে-বাসে, রাস্তাঘাটে, অফিস-কাছারিতে আলোচনা এখন এ সব নিয়েই জোরদার। প্রশ্ন সব দলকে নিয়ে উঠছে সাধারণ জনপরিসরের এই চর্চায়। কিন্তু এ বারের নির্বাচনে জনসাধারণকে জবাবদিহি করার সবচেয়ে বড় দায়টা যে মোদী-অমিত শাহদের, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখিয়েছিল বিজেপি। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি-কর্মসংস্থান-দুর্নীতি দমন-নাগরিকের আয় বৃদ্ধি— এমন নানা ক্ষেত্রে ‘আচ্ছে দিন’ এনে দেবেন বলে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেরিয়েছিলেন মোদী। বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থান করার চমকপ্রদ আশ্বাস ছিল। পাঁচ বছর কাটিয়ে বাস্তবতাটা কিন্তু ভিন্ন। কর্মসংস্থানের প্রশ্নে যে প্রতিশ্রুতি মোদী দিয়েছেন, তার সরকারের ‘সাফল্য’ সেই প্রতিশ্রুতির ঠিক বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি বা সিএমআইই-এর সমীক্ষা নরেন্দ্র মোদীদের অস্বস্তি বাড়িয়েছে ভোটের আগে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি তো দূরের কথা, মোদী জমানা বেকারত্বের হার বাড়িয়ে দিয়েছে বলে ওই সমীক্ষা জানাচ্ছে। ২০১৮ সালে ঠিক এই সময়ে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৫.৯ শতাংশ। এক বছরে সেই হার পৌঁছে গিয়েছে ৭.২ শতাংশে। মাত্র এক বছরে কর্মসংস্থানহীনতা এতখানি বাড়তে পারা কিন্তু আঁতকে ওঠার মতো ঘটনা।
এখন এটাই দেখার, নির্বাচনী জনসভার মঞ্চ থেকে মোদী কি ব্যাখ্যা দেবেন, কেন এমনটা হল? নাগরিকদের সমাবেশের সামনে দাঁড়িয়ে মোদী কি স্বীকার করতে পারবেন, তার প্রতিশ্রুতি আর বাস্তব এখন ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা? সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াতে কি পারবেন নরেন্দ্র মোদী? যদি না পারেন, তা হলে ৫৬ ইঞ্চি ছাতির প্রমাণ দেওয়াটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। দেশে কেন বাড়ল কর্মসংস্থানহীনতার হার, দেশে কেন কমে গেল চাকুরিরত নাগরিকের সংখ্যা— এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার দায় কিন্তু মোদীকে দিতেই হবে।