গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হওয়া আত্মঘাতী জঙ্গী হামলার পর থেকেই ক্ষোভের আগুন জ্বলছে গোটা দেশ। সোশ্যাল মিডিয়াতেও উঠছে যুদ্ধের জিগির। আর এর পাশাপাশিই দেশের নানা প্রান্তে কাশ্মীর-বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন কাশ্মীরিরা। তাঁদের ওপর হিংসার ঘটনা ঘটছে প্রায়শই। কখনও চিকিৎসক, কখনও দেরাদূনের পড়ুয়া, কখনও বা নিরীহ শাল বিক্রেতা আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা শুধুমাত্র জন্মসূত্রে কাশ্মীরের বাসিন্দা বলে। এই ছবি বেশি চোখে পড়ছে যোগীর রাজ্যে। এবার ‘কাশ্মীর বিদ্বেষী’দের শিকার লখনউয়ের দুই ফল বিক্রেতা।
বুধবার উত্তরপ্রদেশের রাজধানী লখনউয়ের ডালিগঞ্জে দুই ফল বিক্রেতাকে প্রকাশ্য রাস্তায় মারধরের অভিযোগ উঠল। অভিযোগ, গতকাল বিকেল পাঁচটা নাগাদ দক্ষিণপন্থী সংগঠনের জনা কয়েক সদস্য আচমকাই চড়াও হয় ওই দুই ফল বিক্রেতার ওপর। তাঁদের মারধর করতে শুরু করে। সেই সময় ভিডিও করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়েও দেওয়া হয়। ফেসবুকে শেয়ার করা ভিডিওতে অভিযুক্তকে বলতেও শোনা গেছে যে, শুধুমাত্র কাশ্মীরি হওয়ার জন্যই মার খেতে হচ্ছে তাঁদের। লাঠি দিয়ে বারবার মারায় রক্তাক্ত হন ওই দুই ব্যক্তি। তাঁদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। তাঁরাই উদ্ধার করেন ওই দুই ব্যক্তিকে।
ভিডিওতে আরও দেখা গেছে যে, গেরুয়া রঙের পোশাক পরা দুই ব্যক্তি, কাশ্মীরের দুই ‘ড্রাই ফ্রুট’ বিক্রেতাকে এসে লাঠি দিয়ে মাথায় মারছেন। দুই ব্যক্তি মাথা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। জানা গেছে, পরে পুলিশ এসে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করে। শান্তিভঙ্গের অভিযোগ ও বিশৃঙ্খলার চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু মূল অভিযুক্তকে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। গ্রেফতার হওয়া ওই ব্যক্তিও বিশ্ব হিন্দু দলের সদস্য বলেই জানা গেছে। তিনিই ফেসবুকে ওই নিগ্রহের ভিডিওটি পোস্ট করেছিলেন। তবে পরে সেই ভিডিও তুলে নেওয়া হয়েছে।
গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করে টুইট করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। সেই টুইট প্রধানমন্ত্রীকে ট্যাগও করেছেন তিনি। অন্যদিকে, পুলওয়ামায় জঙ্গী হানার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাশ্মীরিদের ওপর হামলা হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলায় সুরক্ষিত আছেন তাঁরা। এমনকি খোদ কাশ্মীরিরাই এ কথা একবাক্যে স্বীকার করছেন যে, গোটা দেশের মধ্যে মমতার বাংলাই সবচেয়ে শান্ত এবং নিরাপদ আশ্রয়। এমনকি তৎপরতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য টুইট করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়ে ছিলেন ওমর আবদুল্লা। মমতার প্রশংসায় তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলায় কাশ্মীরি যুবকের ওপর হামলার ঘটনায় দিদির সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।’ কিন্তু দেশের নানা প্রান্তে কাশ্মীরিদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় কেন্দ্র থেকে কড়া নির্দেশিকা জারি করা সত্ত্বেও যোগীর রাজ্যে কীভাবে এই জাতীয় ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।