‘দলিতদের পা ধুইয়ে প্রেমের রাজনীতি না করে, প্রধানমন্ত্রী কেন সাফাই কাজে উন্নত যন্ত্রের ব্যবস্থা করছেন না?’ সম্প্রতি এই প্রশ্নই তুলেছিলেন এলাহাবাদ পুরসভায় চেম্বার সাফাই করতে নেমে মৃত দুই সাফাইকর্মীর বোন বীণা। এবার নিজেদের দুর্দশার কথা জানাচ্ছেন সেই পাঁচ সাফাইকর্মী, প্রয়াগরাজে কুম্ভস্নানে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং যাঁদের পা-ধুইয়ে দিয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, সারা বছর মানুষের জন্যে কাজ করার থেকে বিদেশযাত্রাতেই বেশি মন থাকে মোদীর। তবে লোকসভা ভোট যতই এগিয়ে আসছে, ততই ভোটব্যাঙ্ক বৃদ্ধি করতে মানুষের কাছে আসার চেষ্টা করছেন তিনি। তাই লোক দেখাতে কুম্ভে গিয়ে সাফাইকর্মীদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন মোদী। মিডিয়ায় ফলাও করে তা প্রচারও হয়েছিল। আর তার ফলে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন পেয়ারে লাল, হরি লাল, নরেশ কুমার, চৌবি এবং জ্যোতি – এই ৫ সাফাইকর্মী। ২৪ ফেব্রুয়ারির সেই ঘটনা এখন অতীত। কুম্ভ-পর্ব শেষ হওয়ার পরে নিজেদের কাজে ফিরে গিয়েছেন পেয়ারেরা। মনের মধ্যে রয়ে গিয়েছে মোদীর স্মৃতিটুকু, কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন কিছুই হয়নি।
পেয়ারের আক্ষেপ, প্রধানমন্ত্রী পা ধুইয়ে দিলেও তাঁর সঙ্গে কথা বলার অনুমতি ছিল না পাঁচ সাফাইকর্মীর। পেয়ারে বলেন, ‘কথা বলার সুযোগ পেলে ওঁর কাছে একটা স্থায়ী চাকরি আর বেতন বাড়ানোর আবেদন জানাতাম।’ সেদিন মোদীর দেওয়া একমাত্র উপহার, গামছাটি এখনও সযত্নে রেখে দিয়েছেন পেয়ারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগে ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ তাঁদের পাঁচ জনকে যেভাবে বেশ কয়েকঘণ্টা ধরে একটা ঘরে তালাবন্ধ করে রাখা হয়েছিল, তাতে কিছুটা অস্বস্তিতেই পড়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের বান্দা জেলার ধোরাইতার বাসিন্দা হরি। এবং মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের পরেও যে তাঁদের অবস্থার বিন্দুমাত্রও উন্নতি হয়নি, সে কথাও সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
একই কথা বলেছেন, কুম্ভে কাজ করতে আসা জ্যোতিও। স্বামী বাবলুর সঙ্গে এবারই প্রথম ‘কুম্ভযাত্রা’ ছিল ২১ বছরের ওই দলিত মহিলার। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি দেখে বেশ ক্ষুব্ধ তিনি। মোদীর স্বচ্ছ ভারতে কেন সাফাইকর্মীদের দিয়ে মনুষ্য-বর্জ্য পরিষ্কার করানো হবে, সরাসরি সেই প্রশ্নও তুলেছেন। জ্যোতির কথায়, ‘বিষ্ঠা সাফাইয়ের কাজ তো যন্ত্র দিয়েও করানো যায়।’ তা ছাড়া কুম্ভের সাফাইকর্মীদের দৈনিক ভাতা অন্তত ৫০০ টাকা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। আবার দলিত যুবক নরেশের গলায় হাতাশায় সুর, ‘বংশানুক্রমে আমরা মল-মূত্র-আবর্জনা সাফাইয়ের কাজ করে আসছি। হয়তো এভাবেই করে যেতে হবে চিরকাল।’