ডিসলেক্সিয়ার সমস্যায় আক্রান্ত বিশেষ শিশুদের নিয়ে অত্যন্ত অসংবেদনশীল মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷কংগ্রেসের রাহুল এবং সোনিয়া গান্ধীকে বিঁধতে গিয়ে ডিসলেক্সিয়া আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর সেই অসংবেদনশীল আচরণের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হতেই নিন্দায় সরব হন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। শুধু তাই নয় সোশ্যাল মিডিয়া গর্জে উঠল মোদীর ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে৷
প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলে রবিবারেই দাবি জানিয়েছিল গোটা দেশে বিস্তৃত ‘ন্যাশনাল প্ল্যাটফর্ম ফর দ্য রাইটস অব দ্য ডিসএবেল্ড’ (এনপিআরডি) মঞ্চ। সোমবার বিভিন্ন রাজ্যে তাদের সহযোগীদের যৌথ বা একক ভাবে প্রতিবাদ-কর্মসূচিতে শামিল হওয়ার ডাক দেওয়া হয়।
ডিসলেক্সিয়ার স্পেশ্যাল এডুকেট লিপিকা ভট্টাচার্য এবং কলকাতার সমাজকর্মী দিব্যা জলান বলেছেন, ” একেই তো ডিসলেক্সিকদের বিষয়ে সচেতনতা খুবই কম। তার উপরে সেই বিষয়ে আলোচনার সময়ে প্রধানমন্ত্রী রসিকতা করলে পুরো বিষয়টাই খেলো হয়ে যায়”৷
২০১৬-র প্রতিবন্ধী অধিকার আইনে স্পষ্ট বলা আছে, জনপরিসরে প্রতিবন্ধীদের কেউ অপমান করলে তাঁর ছ’মাস থেকে পাঁচ বছরের জেল ও জরিমানা হবে। সেই আইন যাতে কার্যকর হয়, তা দেখার কথা কেন্দ্রীয় প্রতিবন্ধী কমিশনের। এনপিআরডি-র সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদিকা শম্পা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে সরকারি কমিশনের ভূমিকা দুর্ভাগ্যজনক”৷
এর আগেও বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ের একটি সভায় এক ব্যক্তিকে মেরে হাতে ক্রাচ ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি নিয়ে বিতর্কেও কমিশন কিছু করেনি। গত লোকসভা ভোটের প্রচারেও মোদী দৃষ্টিহীন, বধির ও পঙ্গুদের প্রতি অপভাষা ব্যবহার করেছিলেন। বারবার মানুষের সম্পর্কে এহেন কুরুচিকর মন্তব্য করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা। কিন্তু এবারে যেভাবে ডিসলেক্সিক মানুষদের সম্পর্কে ঠাট্টা করেছেন তা সত্যিই নিন্দনীয়। সমাজকর্মী রত্নাবলী রায়ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় গণস্বাক্ষর-অভিযানের ডাক দিয়েছেন।
ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলছেন মোদী। প্রতিযোগিতাটি ছিল, মা-সন্তান জাতীয় সমস্যাগুলিকে কী ভাবে প্রযুক্তি দিয়ে মেটানো যায়, সে বিষয়ে নানা রকম ধারণার কথা বলছেন পড়ুয়ারা। এই প্রতিযোগিতায় নানা কথা বলতে গিয়েই ওঠে ডিসলেক্সিয়া প্রসঙ্গ। দেরাদুনের এক এঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রী বলেন, ‘যে সমস্ত ডিসলেক্সিক বাচ্চাদের শেখার গতি খুব ধীর, যারা অনেক সময় নেয় লিখতে, অথচ বুদ্ধিমত্তা ও সৃজনশীলতা খুবই বেশি, এতটা বলার পরেই মোদী তাঁকে থামিয়ে মন্তব্য করেন, ‘এই প্রোগ্রামিং কি ৪০-৫০ বছর বয়সের ধেড়ে খোকাদের ক্ষেত্রেও একই কাজ করবে’? হাসির রোল ওঠে প্রেক্ষাগৃহে। হাসতে থাকেন মোদী নিজেও। ওই ছাত্রী অবশ্য একটুও না ঘাবড়ে উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ স্যার, সব বয়সের জন্যই কাজ করবে’। মোদী না থেমে ফের বলেন, ‘তা হলে এ রকম বুড়ো খোকাদের মায়েরা খুব খুশি হবেন’। অনেকেই বলেছেন এটা চূড়ান্ত অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন মোদী।