দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন। আর তার আগে নানা ইস্যুতেই বি-‘পাঁকে’ পদ্ম। যে কারণে চিন্তিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং। তাঁর মনে যে গদি হারানোর ভয় ঢুকে গেছে, তার স্পষ্ট আভাস মেলে যখন বরাবর ‘সুবক্তা’ বলে পরিচিত মোদীও ভাষণ দিতে গিয়ে সব গুলিয়ে ফেলছেন! বারংবার ভুল বলছেন। কথা হাতরাচ্ছেন। এবার যেমন কোচিকে করাচি বলে বসলেন তিনি! গুজরাটের জামনগরে ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের গুণগান করতে গিয়ে মোদী বললেন, ‘কলকাতা হোক বা করাচি, সর্বত্রই এই প্রকল্পের সুফল পাওয়া যাবে।’ তবে নিজের ভুল বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি শুধরে নেন তিনি। সাফাই গান, ‘করাচি নয়, কোচি…আসলে আমার মাথায় এখন সব সময়েই প্রতিবেশী দেশের কথাই ঘুরছে!’
প্রসঙ্গত, রবিবার আমেঠির এক সভায় নাম না করে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে বিঁধতে গিয়ে মোদী বলেছিলেন, ‘আমি কারও নাম করছি না। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি দেন। সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে বলেন, প্রতিশ্রুতি দিয়ে না কি পালন করেন, মিথ্যা বলেন না। কিন্তু উনিও অনেক বড় মিথ্যা বলেন।’ এরপর প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে দেখিয়ে মোদী বললেন, ‘দেশের প্রথম প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন!’ এমনকি এক অনুষ্ঠানে টেলিপ্রম্পটারে ‘কালাশনিক’ভ রাইফেলের নাম বলতে গিয়েও বার দুয়েক হোঁচট খান প্রধানমন্ত্রী!
যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিরোধীরা। মোদীর মুখে ‘উনিও অনেক বড় মিথ্যা বলেন’ শুনে কংগ্রেস বলেছিল, “এটি কি নরেন্দ্র মোদীর স্বীকারোক্তি না আক্রমণ? ‘উনিও বলেন’ বলে মোদী তো স্বীকার করেই নিলেন যে উনি নিজেও মিথ্যা বলেন!’’ পাশাপাশি, নির্মলা প্রসঙ্গেও সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। তাঁদের কথায়, ক’দিন আগে তামিলনাড়ুতে গিয়ে নির্মলাকে প্রথম মহিলা প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলে দাবি করেছিলেন মোদী। যেটি সম্পূর্ণ ভুল। এবারে তো একধাপ এগিয়ে নির্মলাকে প্রথম প্রতিরক্ষামন্ত্রী বানিয়ে ফেললেন মোদী!
এরপরেও গতকাল ফের মুখ ফস্কাল তাঁর। দিল্লীতে কংগ্রেস বলছে, পুলওয়ামার ঘটনার পরে বেঙ্গালুরুর ‘করাচি বেকারি’-র দোকানে পাকিস্তানের ছোঁয়া রয়েছে বলে স্বঘোষিত দেশরক্ষকেরা হামলা চালিয়েছিল। হুমকি দিয়ে সাইনবোর্ডের ‘করাচি’ শব্দটিও ঢেকে দেওয়া হয়। পাকিস্তানের কোনও নাম ব্যবহারকে ‘দেশদ্রোহ’ বলে ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাই এখন যে খোদ প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে ‘করাচি’ বেরোল, তার বেলায়? আসলে ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই সব গুলিয়ে যাচ্ছে তাঁর। কারণ এবার যে তাঁর কুর্সি টালমাটাল, এবার যে আর ‘আচ্ছে দিন’-এর ‘জুমলা’ দিয়েও পার পাবেন না তিনি তা স্পষ্ট বুঝেছেন মোদী।
অন্যদিকে, পুলওয়ামার ঘটনার পরে কেন্দ্রের পাশেই দাঁড়িয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু পাকিস্তানে বায়ুসেনার অভিযানের পরে মোদী সরকার বার বার বিরোধীদের নিশানা করায়, পুলওয়ামায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস বলেছে, এর দায় কেন মোদী সরকার নেবে না? সেইসঙ্গে মোদীকেও নিশানা করে রাহুল বলেছেন, শুধু মুখ ফস্কে ভুল বলাই নয়, জেনেবুঝে মিথ্যে বলেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, রাশিয়ার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে যে অস্ত্র বানানোর কথা ঘটা করে প্রচার করেছেন মোদী, ২০১০ সালেই আমেঠির সেই কারখানার শিলান্যাস করেছিলেন রাহুল। কয়েক বছর ধরে সেখানে ছোট অস্ত্রও তৈরি হচ্ছিল।
টুইটে এ কথা জানিয়ে মোদীকে নিশানা করে রাহুলের মন্তব্য ‘গতকাল আপনি অমেঠী গিয়েছেন। স্বভাবে বাধ্য হয়ে ফের মিথ্যেও বলেছেন। সত্যি আপনার বিন্দুমাত্র লজ্জা হয় না?’ আসলে মোদীর কাছে এখন লজ্জার চেয়েও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে কুর্সি বাঁচানোর চিন্তা।