ঘড়িতে সময় ক্রমশ গড়াচ্ছে, নানা সূত্র মারফত এক-একটা সময় জানা যাচ্ছে, আর তা পেরিয়েও যাচ্ছে। অবশেষে ধৈর্যের বাঁধ যখন ভাঙতে বসেছে, তখন সীমান্তের গেটের ও-পারে দেখা গেল তাঁকে। পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে লাইন ওফ কন্ট্রোল ধরে এগিয়ে এসে রাত ৯টা ২১ মিনিটে ভারতের মাটিতে পা রাখলেন দেশের বীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। আটারি সীমান্তে তখন উৎসবের মেজাজ। দেশ জানায় অভিনন্দন। আটারি সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করতেই শুভেচ্ছার বার্তা সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে। সীমান্তে দাঁড়িয়েই বলেন, দেশে ফিরতে ভালো লাগছে। তারপর দ্রুত তাঁকে সেখান থেকে নিয়ে যায় বায়ুসেনা। আপাতত জানা গিয়েছে, দিল্লিতে মিলিটারি হসপিটালে তাঁর মেডিক্যাল চেক আপ হয়েছে। তিনি এখন আছেন এয়ার ফোর্সের হস্টেলে।
পালম এয়ারবেস থেকে অভিনন্দনকে নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির সুব্রত পার্কের এয়ারফোর্স সেন্ট্রাল মেডিক্যাল এসটাব্লিশমেন্ট-এ। বায়ুসেনার ওই হাসপাতালে রাতেই প্রথামিক একটা মেডিক্যাল চেকআপ হয় অভিনন্দনের। পরিবারের সঙ্গে এক ঝলক দেখা হয়। তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোনও বাক্যবিনিময়ই হয়নি তাঁর। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, রাতে হালকা খাবার খেয়েছেন অভিনন্দন। একটা নাগাদ ঘুমোতেও যান।
নিয়মমাফিক এবার তাঁকে কয়েকদফা প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। যুদ্ধবন্দিরা দেশে ফিরলে গোয়েন্দারা তাঁদের থেকে জানার চেষ্টা করেন তাঁরা কোনও গোপন তথ্য শত্রু দেশকে দিয়েছেন কিনা। শত্রু কোনওভাবে তাঁদের মগজ ধোলাই করেছে কিনা। পাকিস্তানের অফিসারেরা তার গায়ে কোনও ‘চিপ’ লাগিয়ে দিয়েছেন কিনা সেই পরীক্ষাও হয়েছে
আজ সকাল সকালই বিছানা ছাড়েন অভিনন্দন। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, রাতে ভাল ঘুম হয়েছে উইং কমান্ডারের। সকালের জলখাবারের পর ফের একপ্রস্থ মেডিক্যাল চেক আপ হয় তাঁর। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, সারা দিন ধরে নানা পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে অভিনন্দনকে। এর মধ্যে রয়েছে সাইকোলজিক্যাল অ্যানালিসিস টেস্ট (পিএটি), ডিব্রিফিং এবং বাগ স্ক্যানিং।
সাইকোলজিক্যাল অ্যানালিসিস টেস্টের মাধ্যমে অভিনন্দনের বর্তমান মানসিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা হবে। পাক সেনার হাতে আটক হওয়া থেকে শুরু করে পর পর যে ঘটনাগুলো তাঁর সঙ্গে ঘটেছে তাতে কতটা ট্রমায় রয়েছেন সেটাও পরীক্ষা করে দেখা হবে। পাশাপাশি, ও রকম একটি পরিস্থিতি কী ভাবে সামলেছেন, তাঁকে পাকিস্তানে কোনও মানসিক অত্যাচার করা হয়েছে কিনা সব কিছুই এই টেস্টের মধ্য দিয়ে জানার চেষ্টা করা হবে বলে বায়ুসেনা সূত্রে জানানো হয়েছে।
সাইকোলজিক্যাল অ্যানালিসিস টেস্ট হওয়ার পর পরবর্তী ধাপ ‘ডিব্রিফিং’। বায়ুসেনা সূত্রে জানানো হচ্ছে, পাকিস্তানে তাঁর সঙ্গে কী কী করা হয়েছে সেটা সবিস্তারে শোনা হবে। শুধু তাই নয়, এখন থেকে তিনি কী ভাবে এবং কতটা কথা বলবেন সেটাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী হোক বা পরিবারের সদস্য, এই ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি কতটা বলবেন সেটাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে।
এর পরের ধাপ ‘বাগ স্ক্যানিং’। শরীরে কোনও চিপ আটকে দিয়েছে কি না বা কোনও গোপন ক্যামেরা, বাগ স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে এ সবই চিহ্নিত করা হয়। এক জন বায়ুসেনা অফিসার। দেশের নিরাপত্তার খুঁটিনাটি তাঁর সঙ্গে জড়িয়ে। দেশের নিরাপত্তার খাতিরেই অভিনন্দনের বাগ স্ক্যানিং করা হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে কত দিন ধরে এই পরীক্ষাগুলো চলবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানায়নি বায়ুসেনা।