২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গুজরাট হিংসার সময়ে আহমেদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটি আবাসনে হামলা চালিয়েছিল উত্তেজিত জনতা। সেই সময়ই হিংসার মাশুল দিয়েছিলেন এক ১৪ বছরের কিশোর আজহার। যে নাকি আজও ‘নিখোঁজ’!
‘ছেলের আজহার নামের জন্য খুব সমস্যা হয়েছিল সে সময়ে। ওর খোঁজে পুলিশ চৌকিতে গেলে ওরা বলছিল, তোমার ছেলে হয়তো পাকিস্তান চলে গিয়েছে!’ — ১৭ বছর আগের কথা বলতে গিয়ে ফোনের ও’পারে ঝরঝরিয়ে কেঁদে ফেললেন আজহারের মা রূপা মোদী। তবে কয়েক মিনিট পরেই নিজেকে সামলে নিয়ে তিনি বললেন, ‘একদিন আমার ছেলে ফিরে আসবেই।’ উল্লেখ্য, এই পরিবারকে নিয়েই তৈরি হয়েছিল ‘পরজানিয়া’ ছবিটি।
প্রসঙ্গত, জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ, ৭৩ বছরের এহসান জাফরিকে। এখনও প্রতি বছর অন্তত এই দিনে সোসাইটি চত্বরে একত্রিত হন তাঁদের প্রিয়জনেরা। চত্বরের মসজিদে চলে কোরান পাঠ, প্রার্থনা। একে অন্যের সান্নিধ্যে এসে সান্ত্বনা খোঁজেন। তবু ১৭ বছর পরে ভয়ে ভয়ে এই ‘বাড়ি’তে ফিরতে হয় রূপাকে। তিনি জানান, ‘আজও সোসাইটিতে আসতে গেলে নিরাপত্তারক্ষী সঙ্গে নিতে হয়। ভাবতে হয়, আবার কাউকে যেন না হারাই। ১৭টা বছর এই ভাবেই ভয়ে ভয়ে বাঁচছি।’
আমেরিকায় বসে সে দিন ইন্টারনেটে বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়েছিলেন এহসানের মেয়ে নিশরিন জাফরি হুসেন, যা আজও কুরে কুরে খায় তাঁকে। তিনি বলছেন, ‘সে দিন যে শিশুদের প্রাণে বাঁচাতে পেরেছিলেন বাবা-মায়েরা, তারা আজ বড় হয়েছে। ওদের বলছিলাম কী ভাবে আমার বাবাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। কী ভাবে ঘৃণার মাশুল দিয়েছিল আমাদের প্রিয়জনেরা। ওরা বিশ্বাস করতে পারছিল না। ওদের মুখচোখ দেখে মনে হচ্ছিল, যেন কোনও ভয়ের ছবির গল্প বলছি।’
বর্তমানে দেশে ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, জাতীয়তাবাদের জিগির তুলে ভেদাভেদের আশঙ্কা ২০০২-এর সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে রূপা-নিশরিনদের। রূপার কথায়, ‘২০০৯ সালে গোধরা যেতে চেয়েছিলাম বলে আমাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। দু’পক্ষ এক হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তা হতে দেওয়া হয়নি। ১৭ বছর পরে আজও কিছুই বদলায়নি।’ আর নিশরিনের মতে, এই মানসিকতা বদলাতে শক্ত হাতে হাল ধরার প্রয়োজন রয়েছে সরকারের।
তাঁর কথায়, ‘কারও চোখে যখন ঘৃণা থাকে, তখন সে দেখতে পায় না যে, কাকে মারছে। পুলওয়ামায় জওয়ানদের মেরে কি এক লহমায় কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হল? কাশ্মীরিদের উপরে হামলা চালিয়েই বা কী পাচ্ছি আমরা! হিন্দু-মুসলিম— এতে কার ভাল হচ্ছে?’ তবে উপায়? ‘গোধরার সময়ে সরকার শক্ত হাতে হাল ধরলে কয়েকশো নির্দোষ মানুষকে মরতে হত না। এখনও সেটাই হচ্ছে। টিভি-হোয়াটসঅ্যাপে-ইন্টারনেটে ভুয়ো খবর ছড়ানো বন্ধ করতে হবে সরকারকে।’ সাফ জানাচ্ছেন নিশরিন।