পুলওয়ামায় জঙ্গী হামলার পর থেকেই ক্রমশ পায়ের তলার মাটি আলগা হচ্ছে পাকিস্তানের। আর এবার আন্তর্জাতিক স্তরে আরও কোণঠাসা হওয়ার পথে পাকিস্তান। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে সিআরপিএফ-এর কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গী হামলা চালিয়েছিল পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ। আর সেই সংগঠনের মাথা মাসুদ আজহার এখনও পাকিস্তানেই বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাই আবারও রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মাসুদকে ‘গ্লোবাল টেররিস্ট’ তকমা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হল। এবার আর ভারত নয়, এই প্রস্তাব দিল নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্য দেশ আমেরিকা, ফ্রান্স এবং গ্রেট ব্রিটেন। অর্থাৎ কোনও রাখঢাক না রেখেই সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভারতের পাশে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দিল এই তিন শক্তিধর রাষ্ট্র।
প্রসঙ্গত, পুলওয়ামার হামলার পর থেকেই মাসুদ আজহারকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা করার জন্য রাষ্ট্রসংঘের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছে ভারত। এই আবেদনে এ বার ভারত পাশে পেল আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে। নিরাপত্তা পরিষদে এই প্রস্তাব পাস হয়ে গেলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এক বড় জয় পাবে ভারত। কারণ একবার জইশ প্রধানকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা করে দিলে, মাসুদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে। এছাড়াও কোনও দেশ সহজে জইশ-কে অস্ত্র বা অন্য কোনও ভাবে সাহায্য করতে পারবে না। ফলে এই জঙ্গী সংগঠন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়বে। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তিন দেশ, যাদের ভেটো প্রয়োগ করার ক্ষমতা আছে, তাদের তরফে এই আবেদন সত্যিই উল্লেখযোগ্য। আরেক ভেটো-ধারী দেশ রাশিয়াও এই প্রস্তাবে সম্মত হবে বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। কারণ, মাসুদ আজহারকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা করার কথা এর আগেও বলেছে রাশিয়া।
বাকি থাকলো চীন। এবার সব চাপ চিনের উপর। ভারতের তরফে আগে যতবার মাসুদ আজহারকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে, ততবারই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে চীন। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন-এর ‘ভেটো’তেই ভারতের আশা পূর্ণ হয়নি। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের আঁতাতের কথা সবাই জানে। অস্ত্র থেকে শুরু করে নৈতিক সমর্থন, সব ক্ষেত্রেই বেজিংকে পাসে পায় ইসলামাবাদ। উল্লেখ্য, পুলওয়ামার হামলার পরেও যেখানে আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে প্রায় ৪২টি দেশ এই হামলার নিন্দা করে ভারতকে সমর্থন করেছে, সেখানে চীন জানিয়েছে ভারত-পাকিস্তান দু’দেশকেই ঠান্ডা মাথায় এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। অর্থাৎ সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করতে চায়নি শি জিংপিং-এর সরকার।
কিন্তু এক্ষেত্রে চীনের বিরোধিতা করা সহজ হবে না বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ, এ বার রাষ্ট্রসংঘে এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতো ভেটো-ধারী তিনটি দেশ। রাশিয়াও যদি এই প্রস্তাবে সমর্থন করে, তাহলে একা চিনের পক্ষে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করা অতটা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা। কারণ চার ভেটো-ধারী দেশের বিরুদ্ধে একা দাঁড়ানো সহজ হবে না চীনের পক্ষে। এরকম করলে সবার সামনে এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে, সন্ত্রাসবাদ দমনে উৎসাহী নয় চীন।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির কাছে এই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ১০ দিন সময় রয়েছে। অর্থাৎ ১০ দিনের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে, মাসুদ আজহারকে গ্লোবাল টেররিস্ট ঘোষণা করা হবে কিনা। এখন দেখার, নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ঠিক কী অবস্থান নেয় ভারতের আরেক পড়শি দেশ চীন। উল্লেখ্য, ২০০১ সালে ভারতে সংসদ হামলা করার পিছনেও এই জইশ জঙ্গীদের হাত ছিল। আর তারপরই ওই বছর মাসুদের সংগঠনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাষ্ট্রসংঘ। আপাতত নিরাপত্তা পরিষদে নতুনভাবে তিন দেশের এই প্রস্তাবে ঘরে এবং বাইরে চাপের মুখে পাকিস্তান।