গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জইশ জঙ্গীর আত্মঘাতী বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল পুলওয়ামা৷ শহীদ হয়েছিলেন ৪৪ জন জওয়ান৷ তাঁদের সহকর্মীরা চোখের জল এবং মনের দৃঢ়তা নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন এই আত্মত্যাগ বিফলে যাবে না৷ আজ ছিল কথা রাখার পালা৷ এবার রক্তের বদলা হিসেবে প্রত্যাঘাত করল ভারত। ঠিক ১২ দিনের মাথায় নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করল ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান।
সূত্রের খবর, আজ ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ বায়ুসেনার ১২টি মিরাজ ২০০০ যুদ্ধবিমান পাক জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে লেজার নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থার সাহায্যে ১০০০ কেজি বোমাবর্ষণ করা হয় জঙ্গী ক্যাম্পগুলির ওপর। যে উদ্দেশ্য নিয়ে স্ট্রাইক করেছিল ভারত তা পুরোপুরি সফল৷ জানা গেছে, পূর্বপরিকল্পিত ভাবেই এই অভিযান চালানো হয়। সোমবার বালাকোট সেক্টর থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রায় ৮০ কিলোমিটার ভিতরে ঢোকে ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান। এরপর বালাকোট, চাকোটি এবং মুজফফরাবাদে জইশ-ই-মহম্মদের তিনটি লঞ্চপ্যাড ধ্বংস করে ভারত। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় জইশের কন্ট্রোল রুম আলফা-৩।
ভোর তখন সাড়ে তিনটে। বায়ুসেনার ওয়েস্টার্ন কম্যান্ড যে তারও এক ঘণ্টা আগে থেকে সক্রিয়, তা নাকি সিভিল এয়ার সিস্টেমেও আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু ঘটনা যে এ দিকে এগোচ্ছে কে জানত! ভোর রাতে, তখনও নিকশ অন্ধকারের মধ্যে ভারতীয় বায়ুসেনা প্রথম আঘাত হানল পাকিস্তানের বালাকোটে। সাউথ ব্লক সূত্র জানাচ্ছে, মিনিট পনেরোর অপারেশনেই নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে খাইবার-পাখতুনখোয়া অঞ্চলে জঙ্গী শিবির একেবারেই নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনা। তবে এতে ভারতীয় সেনার কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেই খবর৷
বায়ুসেনা সূত্রে খবর, ভারতের অপারেশন প্রথম দফায় সফল। এ দিন ভোর রাতে মুজফফরাবাদে সেক্টর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে প্রবেশ করে ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ ২০০০ বিমান। বালাকোটের দূরত্ব সেখান থেকে প্রায় পঞ্চাশ মাইল। সাউথ ব্লক জানাচ্ছে, ১২ টি মিরাজ যখন নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে ওপারে ঢোকে তখন টেরও পায়নি ইসলামাবাদ। তার পর এক হাজার কেজি ওজনের বোম দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বালাকোটের সমস্ত জঙ্গি শিবির।
এখন প্রশ্ন, বালাকোটই কেন? গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে জঙ্গি হামলার নেপথ্যে ছিল পাক জঙ্গী গোষ্ঠী জইশ ই মহম্মদ। জইশ চিফ মাসুদ আজহার ও তার ভাই আকছার বালাকোটে জঙ্গি শিবিরে যায়। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সেটাই তাদের মূল ঘাঁটি।
বায়ুসেনা সূত্রে জানা যাচ্ছে, পাকিস্তানের দিক থেকে সম্ভাব্য পাল্টা আক্রমণ ঠেকানোরও প্রস্তুতি সমান্তরাল ভাবে রাখা হয়েছিল। ১২ টি মিরাজ বিমান যখন বালাকোটে হামলা চালাচ্ছে, তখন নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উড়ান শুরু করে দেয় ভারতীয় সেনা বাহিনীর এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং এয়ারক্রাফ্ট। তা ছাড়া একটি সি-১৭ গ্লোবমাস্টার ও একটি এন-৩২ বিমানে সেনা জওয়ানও মজুত রাখা হয়েছিল নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর। দু’টি বিমানে মিলিয়ে ১৯০ কম্যান্ডোকে ‘ব্যাটল রেডি’ রাখা হয়েছিল সম্ভাব্য অপারেশনের জন্য।