আচমকাই ভোল বদল করলেন ইমরান খান। যিনি কিছুদিন আগেও হুমকি দিয়েছেন ভারত হানা দিলে উপযুক্ত জবাব দেবে পাকিস্তান, সেই তিনিই হঠাৎই ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে আহ্বান জানালেন, আসুন, শান্তির পথে দুই দেশের মধ্যেকার সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা যাক। তাঁর প্রতিশ্রুতি, ভারত যদি উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ দিতে পারে, তিনি অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রয়াত সংগীত শিল্পী জন লেননের বিখ্যাত গানের প্রথম লাইনটি উদ্ধৃত করেন, গিভ পিস এ চান্স।
যদিও এই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বক্তব্যে ফলে ইমরানের এই বার্তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে না নয়াদিল্লি। বিদেশ মন্ত্রকের যুক্তি, ২৬/১১ থেকে পাঠানকোট হামলা, পাকিস্তানকে বহুবার পাক মদতে সন্ত্রাসের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করেনি ইসলামাবাদ।
পাক প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে ইমরান খান বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তাঁর কথা রাখবেন।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, “পাকিস্তানে জঙ্গি কার্যকলাপের কার্যকরী প্রমাণ দিলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”এর পর মোদীর উদ্দেশে পাক প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান, “শান্তির জন্য একটা সুযোগ দিন”। পুলওয়ামা হামলার পরও এই একই কথা বলেছিলেন ইমরান। শুধু তার সঙ্গে ছিল হুঁশিয়ারি, ‘‘ভারত আক্রমণ করলে পাকিস্তান জবাব দেবে।’’ বাকিটা পাকিস্তানের গতানুগতিক অবস্থান তথা অজুহাত।
হ্যাঁ, অজুহাতই কারণ ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক আগেও বলেছে, ২৬/১১-র মুম্বই হামলায় জঙ্গিরা যে পাকিস্তান থেকে এসেছিল, আজমল কসাব পাকিস্তানের নাগরিক, হামলার মাস্টার মাইন্ড যে মাসুদ আজহার এবং সে যে পাকিস্তানের আশ্রয়েই রয়েছে, সে সবের দিস্তা দিস্তা নথি দেওয়া হয়েছে। আবার পাঠানকোট হামলায় শুধু নথি দেওয়া নয়, পাক তদন্তকারী দল বায়ুসেনা ঘাঁটিতে পর্যন্ত এসে সরেজমিনে দেখে গিয়েছে। কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও নজির নেই। যতই তথ্যপ্রমাণ দেওয়া হোক, ইসলামবাদ বলেছে, যথেষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে ফের একবার ইমরান প্রমাণ চেয়ে পাকিস্তানের পুরনো অবস্থানকেই আরও একবার মজবুত করলেন ইমরান।
বাকি রইল শান্তির আহ্বান। পর্যবেক্ষদের মতে, এটাও কোনও নতুন বার্তা নয়। এক্ষেত্রেও বিদেশ মন্ত্রকের দীর্ঘদিনের অবস্থান, পাকিস্তান সন্ত্রাস বন্ধ না করলে কোনও আলোচনা নয়। এই কথা মাঝেমধ্যেই ইসলামাবাদকে স্মরণ করিয়ে দেয় সাউথ ব্লক। সে সব জেনেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবার শান্তি আলোচনার আহ্বান জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন ইমরান। অথচ সন্ত্রাস দমনের প্রশ্ন এলেই হয় প্রমাণ চাওয়া হয়, নয়তো পাকিস্তানের মাটিতে সন্ত্রাসের অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে এ দিনের ইমরানের এই বক্তব্যকেও পাকিস্তানের স্বভাবসুলভ বক্তব্য হিসেবেই দেখছে নয়াদিল্লি। ইমরান এখন ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গেলে বিপদে পড়বেন। কারণ পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। যুদ্ধ করতে গেলে অবস্থা আরও খারাপ হবে। সবাই জানে মৌলানা মাসুদ আজাহার পাকিস্তানে থাকে। আর এই হামলার দায় নিয়েছে তার সংগঠন জৈশ–ই–মহম্মদ। এর আগে মুম্বই হামলার পরও পাক যোগের প্রমাণ ইসলামাবাদকে ভারত দিয়েছিল। কিন্তু এক দশকেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি ইমসামাবাদ। পাঞ্জাবের পাঠানকোটে হামলার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। আর এবারও প্রমাণ চেয়ে দায় এড়ানোর কৌশল নিয়েছে পাকিস্তান। আর তাই কার্যত হাঁটু মুড়ে এভাবে বসে পড়া ছাড়া ইমরান খানের কাছে আর কোনও উপায় ছিল না।